সূত্র ধরলেন উমাপদ কর
তন্ময় কুমার মণ্ডল, নাটক করে, ব্রীহি সাংস্কৃতিক সংস্থায়। আবার নাটক
থেকে সরেও আসে। কবিতা লেখে, লুকিয়ে রাখে। একটা কবিতার বই আছে
শূন্যপিটক, এবং আরও একটা বইয়ের পান্ডুলিপি ওর তৈরি আছে। একটা
অদ্ভুত সিরিজ ও লিখেছে, ‘অহমপুরুষ’ যেটা এখনও প্রকাশ পায়নি।
আমি জানিনা ওটার থেকে আজ ও কবিতা পড়বে কিনা! এখানে কেউ কেউ শুনেছে, কেউ কেউ শোনেনি। ওর বন্ধুরা এবং আমি তো বেশ কয়েকবার শুনেছি। বহরমপুরে
রেহেলের উদ্যোগে যে বারীন ঘোষাল স্মরণসভা হয়েছিল, সেখানে ও
প্রথম এই সিরিজটা থেকে কয়েকটা কবিতা পড়ে। টানা গদ্যে লেখা। বুদ্ধ-বৌদ্ধিক এক
অন্যরকম লেখা। ওর মধ্যে একটা প্রবল আকাঙ্খা আছে কবিতাকে বহমানতার বাইরে নিয়ে
যাওয়ার। আর এটা করতে গিয়ে যে ও প্রচুর মেকিং-এর দিকে যায় বা একটা কৃত্রিমতার দিকে
যায়, তা যায় না বলে আমার মনে হয়েছে। একটা সহজ স্বাভাবিক
চলনের মধ্যে দিয়ে, ও কবিতাটা লেখার চেষ্টা করে। তন্ময় কিন্তু
নিজেকে খুব একটা প্রকাশ-বিকাশ করতে চায় না। রেহেলের সকলেরই এই একই দোষ। তন্ময়
লিখছে অনেকদিন, কিন্তু বহুদিন পর্যন্ত ও নিজেকে লুকিয়ে
রেখেছিল। কবিতা নিয়ে বেশি কথা বলে না কিন্তু কবিতা নিয়ে যে ভাবে সেটা ওর সাথে
কবিতা নিয়ে কথা বললে বা ওর লেখা পড়লে সহজেই বোঝা যায়। তন্ময়কে এবার আমরা শুনি।
তন্ময় কুমার মণ্ডলের কবিতা
অহম পুরুষ- ৫
তথাগতের সঙ্গে কথা বলার পর, আত্মহত্যা বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। এত রঙের অসামঞ্জস্য কীভাবে মৃতদেহ হয় সে বিষয়ে নীরব থেকে তাকিয়েছিলেন শুধু। ঘাম আর ছায়ার কাছে অনুগত ছিলেন, খিদে আর হাড়ের কাছে আনন্দমগ্ন ছিলাম আমি।
আমাকে নদীর দিকে যেতে বলা হল, এত ভেতরে, ফাঁকা আমার ভেতরে খেলা করতে বাধ্য হয়, আমি উড়ে যাই, আমি শান্ত এক বিকেলের কাছে ফিরে আসি, আমার টুকরো নিয়ে কুকুরের জিভ দেখি
“সাঁকো ছিঁড়ে ফ্যালো”…চমকে তাকাই।
“এই সমুদ্রের নিচে তুমি কেবল চিন্তাভাবনা দিয়ে তৈরী করো জগৎ, চিন্তাভাবনা
দিয়ে ভেঙে ফ্যালো – এর বাইরে কিছু নও… তোমার শূন্যতা ওড়ে।
শব্দ বলে কিছু নেই, তুমি তার ভেতর শুয়ে থাকো। বলো গাছ, পাতা ঝরে যায়। এই
বর্ণনাহীন ফলন্ত গাছ আর শেকড় খুঁজে বেড়াও… দ্যাখো দূরে নদী বলে কিছু নেই”
একটি নৌকা আর হাওয়া উঠেছে খুব, তথাগতের পাশে তথাগতের ছায়া – ধ্যানমগ্ন; যেন
তথাগত বলে কিছু নেই, যেন আত্মহত্যাহীন আদিগন্ত ফুঁ
অহম পুরুষ- ৬
তথাগত বাসস্ট্যান্ড অব্দি হেঁটে এলেন। এখানে কোনো বোধিবৃক্ষ নেই, আলমারি
ঝুলে আছে শুধু। আমরা স্বীকারের কোনো চুক্তি পত্র আনিনি, নৌকো নিয়ে কথা হচ্ছিল।
তীরন্দাজ এক শিকারীর হত্যা নিয়ে আমরা অট্টহাস্য করছিলাম।
এই জগৎকে উষ্ণ করার ক্ষমতা তথাগতের ছিলনা অথবা তৃষ্ণা বললে যা যা মনে হয়
তার বাইরের খেলাগুলি জল বলে চিহ্নিত হয়।
এও এক অভ্যাস, দুজনে মুখোমুখি বিশ্রাম নিচ্ছি। দূর থেকে মনে হতে পারে হত্যা
পরবর্তী আমরা আয়না থেকে একই দূরত্বে শান্তি আলোচনা আর তুষারপাতের পক্ষ নিচ্ছি।
দুজনেই ছায়া, সব উষ্ণতা ফিরে গেলে শেকলের গন্ধ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি, পরিত্রাণের উপায়
খুঁজতে হেঁটে যাই। কোনো নদী নেই, গাছ নেই, অস্বীকার অথবা নিবেদন বলেও কিছু হয়না।
সিদ্ধান্তের পর যে রাস্তা জেগে থাকে, তার সম্ভাবনাময় লাফের গর্তে আমি আর তথাগত বসে
এসব ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা করি।
অহম পুরুষ- ৭
ক্রমাগত দরজা খুলে তথাগত এলেন। আমি চেয়েছিলাম এভাবেই হোক – জলপড়ার শব্দে
নড়ুক স্থানের কিনার; বেঁকে থাকা তথাগতের নৌকো, আমি তাকে গোলাকার আঁকি
এক সূক্ষ্ম ফুটো দিয়ে এইসব পরিচালনা করি, দেখি পিঁপড়ের পা নিয়ে পিঁপড়ে
ফিরে যাচ্ছে। তার ছায়ায় ক্লান্ত তথাগত ফণা নামিয়ে বললেন – এরপর আর কী করতে হবে,
বিকারের দেবতা?
কান্নার কাছে আমি আনত। দৃশ্য থেকে আলোহীন অনুভব করি।
আমার অবস্থান নিয়ে তথাগতের ষড়যন্ত্রে আমি ওর সঙ্গী ছিলাম। কীভাবে যেতে হবে
তার বিভ্রম তৈরী করেছিলাম আমি, ক্রমাগত ক্ষীণ ও পরবর্তী-স্থূল ত্রিমাত্রিক সেই
ছায়ায় আমি বলে কেউ নেই, ক্রমাগত আমির মৃত্যু ও জন্ম।
একটি চারাগাছ রচনা করার পর, বলেছিলাম এই হল বোধিবৃক্ষ। তথাগত কোনো বিরোধ
করেননি। কেবল একটি ছায়াকে ক্রমাগত গাছ হতে দিয়েছিলেন।
অহম পুরুষ- ১
বুদ্ধ এগিয়ে গেলেন গৃহটির দিকে। সাদা এক বৈজ্ঞানিক দ্বারে স্তুতি গাইছেন।
পরনে তার প্রশস্ত কষায়বস্ত্র। ঝুলন্ত শিরস্ত্রাণের দিকে তাকিয়ে তার সহধর্মিণী
বললেন - ভগবানের আসন গ্রহণ করা হোক।
বোধিসত্ত্ব এইবার লক্ষ করলেন, একটি কালো পিঁপড়ে ঘুরে ফিরে এক নিরেট পাত্রের
নিকটে বারবার ফিরে আসছে। আসনের পাশে পাদুকাদুটি রেখে যেন মৃদঙ্গ বাজাচ্ছেন এমনভাবে
বসে দুহাতে মুদ্রা উত্থিত করে চেষ্টা করলেন যতটা সম্ভব অপার্থিব হতে। তার চোখ
চন্দ্রবিন্দু, নাসিকায় অনুস্বর ধ্বনি। পিছনে আনন্দ।
সন্ধ্যা হতে সামান্যই বাকি, অতএব জলপান এবং নক্ষত্ররাজির স্থান বিচারের পর,
কাল নির্ণয় হেতু ঘুরে দাঁড়ালেন। আনন্দকে কাছে ডেকে ভাবলেন, এতদিনের সঙ্গী সেও কী
হেলায় ঘুমিয়ে পড়বে! একটি হেলেসাপ দীর্ঘক্ষণ খাবারের অপেক্ষায় ব্রাহ্মণীর দিকে
তাকিয়ে আছে। বৈজ্ঞানিকের পৈতে দুলছে হাওয়ায়। ভগবানের পাদুকা তুলে ধীরে ধীরে তারা
বুদ্ধের দিকে এগিয়ে গেলেন।
ফিরে তাকাতেই বনান্ধকার, সামনে ঝিঁঝিঁ রব; বারবার চেতনায় ফিরে আসছেন,
কিছুতেই মনোনিবেশ করতে পারছেন না, দুদিবস হয়ে গেল, রাত্রি দ্বিপ্রহর। নশ্বর এই
জীবনের অনিশ্চয়তা কোনদিকে যাবে, বারবার ফিরে আসা এই দুঃখ উপত্যকায় কীভাবে সমস্ত
দ্বার রূদ্ধ করা যাবে - ভাবতে ভাবতেই গৌতম পুনরায় সমাধিস্থ হলেন।
কিছুদূর অগ্রসরের পর, একাকী নৌকো বিস্তীর্ণ সমুদ্রে দুলতে দুলতে দিকনির্ণয়
করছে। এ কি স্বপ্ন, নাকি স্বপ্নের মিথ্যে! নৌকোস্থিত শিশু এইবার তাকালো আকাশের
দিকে। রক্তিমবর্ণ মেঘ ও আলোর নিচে উজ্জ্বল জলরাশি দেখে বিস্ময় ও চিৎকারে যে ডাক
দিতে চাইল তা অস্ফুট, জিহ্বা ও স্বরযন্ত্র ততটা উন্নত নয়। অতএব প্রক্রিয়ারত শিশু
হাত তুলে ঢাকতে চাইল যাবতীয় প্রপাত।
পুনরায় দেখা গেল গৃহ। অধিক আলোয় মায়ের ডাক শোনা যাচ্ছে। দুটি শিশুচারাগাছ
পরস্পরের দিকে সমুদ্র টানছে। এত মোহনাময় ওদের ডাক। ফের হাঁটতে শুরু করলেন
বোধিসত্ত্ব। পিছনে আনন্দ। একটি পাখির নিচে পাখির ছায়া পাতায় ও মাটিতে ডানা মেলে
চলেছে ভগবানের সঙ্গে। অথচ ভগবান আকাশে তাকিয়ে দেখলেন ভবিষ্যত দূরবর্তী, কী দেবেন তিনি?
শুধুই কী বিস্ফোরণের গল্প! কীভাবে বলবেন, ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেলেন গহন বনের দিকে।
প্রথমে বললেন- তুমি এক শক্তিবিন্দু।
সবাই তাকালো।
তারপর- আমিও এক শক্তিবিন্দু।
সবাই অবাক।
-আমরা সবাই একেকটি বিন্দু।
সবাই…
এই সমুদ্র অবর্ণনীয় নয়। ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে ধ্বংস দেখালেন। সবাই দেখল
সৃষ্টির পূর্বশর্ত। দর্শক ও শ্রোতাদের মাঝখানে গৌতম দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল- হে
সিদ্ধার্থ, তবে কী অন্ধকার ছিল?
আলো থেকে জন্ম। পরিব্যাপ্ত তেজের কণা। কণা থেকে বিষয় থেকে আকার থেকে
প্রকার। হে বোধিসত্ত্ব, হে বিন্দু, ভ্রমণের পথ ভূগোল, তাকে সীমাবদ্ধ করার প্রয়াস
করো, চেষ্টা করো তোমার সমগ্র নিয়ে। তবেই সেই বিশ্রামাগার পাবে বন্ধু। এতদূর বলে
হাঁফিয়ে উঠলেন। বয়সের ভারে ঠেলে আসা মেরুদন্ড সাপ হয়ে ফোঁস ফোঁস করতে লাগল। দূরে
সমুদ্রগর্জন। অন্ধকার কাটানোর জন্য বুদ্ধদেব একটি মোমবাতি প্রজ্বলিত করলেন। পিছনে
আনন্দ হাত ধরে বলল - তারপর?
শুরু অথবা শেষের দিকে যাচ্ছি আমরা। আমরা পেটফোলা বোমার ভেতরে, আমরা ফুলে
যাওয়া এক বিস্ফোরণ।
ধীরে ধীরে উঠে এসে একটি বেলুন ফুলিয়ে, ফাটিয়ে ফেললেন। আরেকটি বেলুন নিয়ে
পকেট থেকে খুচরো বের করে বেলুনঅলার দিকে তাকিয়ে বললেন- দুঃখই হেতু। দুঃখ বিনাশই
পথ। নশ্বরতাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা কেউই ঈশ্বর নই।
ক্ষুধার্ত শেয়াল নিজের ছায়া খাচ্ছে- ১
আবারও সেই তোলপাড় গৃহ। সাদা বৈজ্ঞানিকের ছায়া আরও সাদা কোনো পর্দার উপর
হেঁসে উঠছে। তথাগত ফিরলেন, শীতে তার কম্পমান দুই চোখ দূর থেকে যেন পরিত্রাণ, পাখি
আর নৌকার প্রতিবিম্ব ত্রিকোণাকৃতি ঢালু। কামড় আর চিহ্নের গতিপথ ফেলে এসে এক বোধের
নিচে শান্ত হাতুড়ি থিতিয়ে পড়ছে।
দরজা লাগাবার শব্দ হল, দরজা তার ক্লান্তি নিয়ে আসছে, পথের নিচে পুনরাগমন,
খাদ্যতালিকা পড়ে ফেলছে যে হাওয়ার কম্পন তার পেটেও প্রতিধ্বনি, বারবার নদী আর
আঁকাহীন মাত্রাকে স্পষ্ট করছে। একটি পোকার বারবার ফিরে যাওয়া, সুরারোপিত কোনো
বিস্ফোরণ, ধ্যানসুখ - তার ভেতর গভীর জিভ…
“তরল রাস্তা ফেলে ফুঁ নিয়ে উঠে এলাম, দশলক্ষ বছরের খিদে আমাকে বানিয়েছে,
আমার ঘাড়ের নিচে আমার দাঁত”-
গৌতম হেসে উঠলেন। তথাগত বালিশের নিচে সহজাত ভোর আলোর রেখা নিয়ে নেমে যাচ্ছে
- “এই পোতাশ্রয় আর সমুদ্র ততটাই নিচু, ফুঁ দিয়ে একে যতটা হালকা বানানো যায়।”
[তন্ময়ের কবিতা শুনতে শুনতে
সকলে যেন সম্মোহিত হয়ে পড়ে, এমনই যে উমাদা
খানিকক্ষণের সাইলেন্স ব্রেক নেওয়ার কথা বলেন।]
উমাপদ কর
সত্যিই এই কবিতা শোনার পর, আমাদের খানিকক্ষণ চুপ করে থাকতে হয়। সাময়িক এই
মৌনতার পরে বলবে, দেবাঞ্জন আর চিত্তরঞ্জন।
সভা কিছুক্ষণ মৌন থাকে। তারপর…
দেবাঞ্জন দাস
একচুয়ালি আমি অহমপুরুষ পড়েওছি, বেরিয়েছিল অপরজন-এ। খুবই
ভালো লেখা, আমার পছন্দের সিরিজের মধ্যে একটা হল অহমপুরুষ। এখানে খুব একটা ডিটেইলস-এ
কিছু বলার নেই। এখানে টেকনিক্যালি কথা বলার কিছু নেই। পড়তে ভীষণ ভালো লাগে আমি যে
ধরনের কবিতা পড়তে ভালোবাসি তার মধ্যে অহম পুরুষের সিরিজ হলো। এটা ভালো লাগে তার
কারণ হল তারমধ্যে বহুস্তরীয় নানা রকম কাজকর্ম আছে, ইঙ্গিত আছে এবং যখন যেখানে যে শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে তা ব্যবহারে
পারফেকশন আছে। একদম ঠিকঠাক পারফেক্ট শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে একটা
কোয়াসি-ফিলোসফিক্যাল স্টেট তৈরি করা আছে যা পড়তে ভাল লাগে। পড়তে পড়তে মনে হয়
এখানে কিছু ভাবার জায়গা আছে। সেগুলো
তৈরি করা আছে মূলত কবির অবজারভেশন দিয়ে। সেটা বুদ্ধ ফিলোজফি কি না, দ্যাটস নট সো ইম্পর্টেন্ট। সেখানে কবির অবজারভেশন টের পাওয়া যায়। যে
কারণে ভালো লাগে।
উমাপদ কর
প্লাস ওই আড়াই হাজার তিন হাজার
বছর আগের যে একটা কিছু জায়গা, আর আজকের যে
প্রেক্ষাপট সামাজিক, ব্যক্তিক, পারিবারিক তার সঙ্গে যে অনেক
সময় টেনে এনে বারবার ঠকাস করে মিলিয়ে দেওয়া বা একটা মিলিয়ে দেওয়ার প্রয়াস, এটাও একটা বেশ ভালো।
চিত্ত বল।
চিত্তরঞ্জন হীরা
যেটা দেবাঞ্জন বলেছে, এক কথায় ওটাই বলা যায়। এই ধরনের লেখার মধ্যে ভালোলাগার এলিমেন্ট প্রচুর। আমার ব্যক্তিগত জীবনে এই ধরণের লেখালিখির সাথে সময় কাটানোর একটা অভিজ্ঞতা আছে। এই ধরনের লেখালেখি আমার সমসাময়িক বন্ধু বা অগ্রজ কাউকে কাউকে পেয়েছি, ফলে এই ধরনের লেখালেখি পড়ার বা এই ধরনের লেখালেখির সঙ্গে যে সময় থাকে তার সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে।
সেই জায়গা থেকে বলতে পারি, এই ধরণের লেখা যারা লেখে তাদের মধ্যে একটা টেনে নেওয়ার টেন্ডেন্সি কাজ করে। এই টেন্ডেন্সিটার মধ্যে একটা
চাপ থাকে, যা পাঠক কে কেন্দ্রের মধ্যে টেনে
নেয়। এই টানটা থেকে, উমাদা যেটা বলল, কবিতা পড়বার পর আমরা চুপ করে থাকি৷ ব্যাপারটা কি, যে পড়া হয়ে গেল, সঙ্গে সঙ্গে কিছু এক্সপ্রেশন
দিয়ে দিলাম, ‘বাহ’ ‘চমৎকার’- এই দিয়ে এই লেখা
গুলো শেষ করা যায় না। কারন এর মধ্যে বিনির্মাণ আছে, পাশাপাশি নতুন
নির্মাণ আছে। ইতিহাসের সঙ্গে সময় বাস্তবতাকে জুড়ে কিছু শব্দ ও বাক্য নির্মাণ;
সঙ্গে সঙ্গে আছে একটা অসম্ভবের সম্ভাব্যতা। বলা যেতে পারে নতুন একটা টেক্সট
তৈরি হচ্ছে। এই কাজগুলো যত বেশি হবে তত সে এগিয়ে এগিয়ে আসবে। ব্যাপারটা, ডিকশনটা, পুরোটাই কবিতা করে তোলার মধ্যে
তথাগত কোথায় অবস্থান করছেন? বা আছেন
কি ? বা
অহমপুরুষের মূল কথা কি আমির নানারূপ? এর মধ্যে দিয়ে
ফুটছে। তথাগত তখন আমি- এই জায়গাটা তৈরি
হচ্ছে কবিতায়। এখন আমি কীভাবে বিলং করছি, কবিতা
সম্পর্কে বা কবিতা যাপনে আমি কোথায় বিলং করছি সেটাও খুব ইন্টারেস্টিং।
একটা টেক্সট তৈরি হচ্ছে এবং সেই
টেক্সট তৈরির প্রক্রিয়াকরনের মধ্যে একটা ফ্লো
আছে। এই গতির কারণে আর যে ক্লাসিকনেস এর মধ্যে আছে, সেটা ভেতরে
টানছে। আমি বেরতে পারবো না। যে যে ধরনের কবিতা আমি শুনলাম এতে আছে এগুলো শ্রুত কবিতা নয়, আমাকে পড়তে হবে, রাজেশ এর কবিতার মধ্যেও এই
এলিমেন্ট আছে। আমাকে পড়তে হবে পরে ফিরে। আর এই কবিতার মধ্যে দুটো গুণ বর্তমান, এক হল- শোনার; একধরনের আনন্দ বা মজা আছে সে আমাকে ওর মধ্যে মোহিত করছে; আর দ্বিতীয় টা- আমি যখন
ফিরে আবার পড়তে বসব ওর যে কারুকার্যগুলো, সেই
কারুকাজগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠবে। কিভাবে
পুরোনোর সাথে নতুন মিলিয়ে নতুন জার্নিটা সে তৈরি করছে, এটা আছে। এটার ফলে এই দুটো
জিনিসই ওর মধ্যে কাজ করেছে। শোনার
আনন্দ ও তারপর আমার যে নিজের পাঠ সেই পাঠের জন্য একটা স্পেস তৈরি করা আছে। তুমি কিন্তু পুরোটা এর মধ্যে
নিতে পারলেনা আমি তোমাকে এখানে টেনে রেখে
দিয়েছি তোমাকে আবার পরে পড়তে হবে। তখন মনে হবে
হ্যাঁ ওটা তো শুনেছিলাম ওটা
কোথাও ছাপা অবস্থায় পেলে আর একবার
দেখতাম। যে ছোট ছোট কারুকাজগুলো সেই কাজগুলোর মধ্যে নতুন কনসেপ্ট, নতুন একটা ফিলোজফিক্যাল
প্রক্রিয়া ওর মধ্যে দিয়ে কাজ করে গেছে। খুব ভালো। এটা বহুদিনের পুরনো হলেও, এটা মরেনা। বহুজনের এমন লেখা পড়েছি, অনেক কবির এবং কবিতার নাম ও
বলতে পারি। তবু ভালো লাগে।
একটা আকর্ষণ, এর মধ্যে মোহিত হওয়ার আকর্ষণটা একটা গুন, যেটা কখনও কখনও ক্ষতিকারক হতে পারে। যদি এটা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা না করে কেউ তাহলে আক্রান্ত হয়ে যাবে, তখন মহাবিপদ হয়ে যাবে। একটা সময়ব্যাপী এই কাজটা করা যেতে পারে কিন্তু পরবর্তীতে কবিকে এটা থেকে বেরিয় এসে নতুন ফর্ম তৈরি করতে হবে, সেটা না হলে নিজের বিপদ তৈরি হবে। এটা আমার মনে হয়।
Post a Comment