সূত্র ধরলেন শঙ্খদীপ কর
রেহেলের শুরুর থেকে, মানে আমরা যখন কনসেপ্ট করছি যে রেহেল কীভাবে করব তখন থেকে উমাদা আছে।
রেহেল একটা অন্যরকম কবিতার কাজ করবে, এটা যখন ভাবছি, তার প্রথমদিন থেকেই উমাদা প্রতিনিয়ত আছে। উমাদার সাথে আমরা ডিসকাস করি,
সহজভাবে ফ্র্যাংকলি বলতে পারি যে উমাদা আমরা এটা এরকমভাবে করছি।
উমাদা কখনও সেটা ওয়েলকাম করে, কখনও কখনও ক্রিটিসাইজও করে।
আসলে আমাদের তো কবিতার ক্ষেত্রে পড়াশোনার বিরাট পরিধি নেই। পত্রিকা করার ক্ষেত্রেও
সেরকম কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। এক্ষেত্রে উমাদা আমাদের সেই এক্সপেরিয়েন্সের এক্স
ফ্যাক্টরটা দেয়।
আমাদের লেখালিখির একদম শুরু
থেকেই আমরা যে কোনও লেখা উমাদার কাছে গিয়ে পড়তে পারি। বলতে পারি, যে উমাদা এটা লিখেছি। আমরা যে কেউ, সেটা যেমনই হোক
না কেন, নিজের ভালো লাগুক বা না লাগুক, নিঃসংকোচে বলতে পারি। উমাদা সেই কমফোর্ট জোনটা আমাদের দেয়, যেখানে গিয়ে আমরা নিজেদের এক্সপ্রেস করতে পারি। উমাদার কবিতা নিয়ে প্রথম
দিকে, মানে একদম শুরুর দিকে উমাদাকে যখন পড়ছি, তখন আমার একটা কথা মনে হত, যে এত কাট কাট লেখা,
এত ছাড়া ছাড়া লেখা কেন? যেটা পরে অবশ্য পাল্টে
যায়। সেই সময়ে, যে সামান্য প্রস্তুতি আমার ছিল, এটা তারি কারণে। আর তারপরে যে জার্নিটা, যে পথটা
আমরা পেরিয়ে এসেছি, লাস্ট কয়েক বছরে, সেক্ষেত্রে
উমাদা এবং সমীরণ দা, দুজনেই আমাদের খুব খুব খুব হেল্প করেছে।
এটা আমাদের সবাই একবাক্যে স্বীকার করবে যে আমাদের এই লেখালিখির ক্ষেত্রে, উমাদা আর সমীরণ দা একটা ছায়াস্থল। সমীরণদা প্রশ্রয় দেয়, আর উমাদা ক্রিটিসাইজ করে। মানে, সমীরণ দা প্রশ্রয়
দেওয়ার মধ্যেও সূক্ষভাবে ক্রিটিসাইজ করে। আর উমাদা ক্রিটিসাইজ করার মধ্যে প্রশ্রয়
দেয়। দুটোর ধরণ আলাদা, কিন্তু এই দুটো ধরনই একে অপরের
পরিপূরক হয়ে আমাদের প্রচুর হেল্প করেছে। এখন শোনা যাক উমাদার কবিতা-
উমাপদ করের কবিতা
ডোবা-ভাসা জলপিপি
১.
বাঁচার লিংকটা খুঁজে চলেছে পুরো গ্রীষ্মকাল
ড্রেন ছেনে সোনা উদ্ধারে যেন হাজার সেনানী
পাহাড় হতে চাওয়া বিলকিস্ বেগম
হতে চাওয়ার মধ্যে হারিয়ে ফেলছেন এক একটা শীৎকার
নদী-গতি হতে ইচ্ছে শিবশংকর বর্মণ
রুমাল ওড়াচ্ছে, ডাকছে দূরকে, না-এগোনো পায়ে
বন-বনানী বনতে চাওয়া ঈশানী মুখার্জীকে কে না চেনে!
সবুজে লুকোনো হরিয়াল সব উড়ে-ঘুরে চলে যাচ্ছে, বাদামি অবশেষ
ওই তো প্রীতম হালদার! সাগর হতে চাওয়া বালু-ভাস্কর
সাগরই ভেঙে দিচ্ছে ঢেউয়ে ঢেউয়ে বিবেকানন্দর জোব্বা
আর মরু! মরুপথ বেয়ে গুটি-গুটি আসছেন স্ট্যাচু-রবীন্দ্রনাথ
হতে পারে কয়েকটা সর্বনাম রেখেছেন আলখাল্লার আস্তিনে
হাসছেন, কাঁদছেনও হতে পারে, বা দুটোই লুকিয়েছে তাঁর গানের কলিতে
এলেই জড়িয়ে ধরবে বাঁচতে চাওয়ার লিংকটা, তখন বর্ষা
হলো না, বড়ো পিচ্ছিল শরীর, ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছেন, শঙ্খ নিজেকে
ধ্বনি করতে মিস করলো
মাহেন্দ্রক্ষণে
২.
দু-দিকেই কাটে
দু-পাশেই রক্তে্র ছানা
ঘাসে, মাসে, সুতোয়
এমনকি চল-চল জলজীবনে
ফিনকি, মগ্নতা থেকে
কোলাহল থেকে ঘামতেল
প্লাজমা প্লাজমা…
কাটে, ছানা্র বুদ্বুদ্
কাটে, ফিনকি ঘোড়ার শফ
ধুলো ধ্বনি উড়তে উড়তে
কিছুটা সময় গিলে ফেলে…
কাটা থেকে রক্ত নয়, ঝরে পড়ে বেদানার রস
হুররে বলে যাকে নিলামে তুলে
দেওয়া যায় না
৩.
ভাসলে, ডুবে যাওয়ার ভয়কে নিয়ে দাবা খেলে খচ্চর
মুখে কাপড় সেঁটে গাধা
চাইছে আস্তাবলের ঘোড়াদের
ধাড়াক্কা
কলম কি আরও নেবে দায়ভার বন্ধকির
কী দিয়েছ? একটা বোতামে টিপ।
হুররে…
ফেরাতে গেলে দাবার ঘুঁটি
চালতে চালতে হাতের কালি
চামড়া সমেত উধাও
নাঙ্গা রাজাকে রাজা, আর
ডানপাশে বসা নুড-কুইনকে
কুইন ভাবতে ভাবতে চালখারাবি
বোড়ে কোথায়, বোড়ে!
ডুবলে ভাসার কথা ভাবা যেতেই পারে, ঘোড়া
টগবগটাকে ঝালিয়ে নেওয়ার এই
তো মোসম
গাধা সংগমে খচ্চর অনেক তো
হলো কেশর ঝলকে
দৌড়ে যা আস্তাবলে, রাজার
কাপড়
আর কুইনের তাজ ধরে দে টান
খসে পড়ুক, পড়ুক কাদায়, তোর
পেচ্ছাপে
৪.
খুঁড়িয়ে চলা রাস্তা
সেফটিপিন লাগানো চপ্পলে পা
গলিয়েছে
ইস্! বললে হেসে ওঠে রক,
ধোঁয়া, গাঁজা-সিগারেট
ঘোড়ার নাল পড়ে আছে এবড়োখেবড়োয়
এক্কাগাড়ি কোমায় গেছে বহুদিন
হাসপাতাল দূর থেকে আরও দূরের
দিকে
দিগন্ত যেখান স্ট্রেচারের
ভাঙা পা নিয়ে বেঁকেছে
হা-ডু-ডু খেলা বালিকার উনযোনি যোনি হবে
চুন-তামাক তেলোয় ঘষে মুখে
পুরে দেওয়া লুঙ্গি
হাসি-খিল্লিতে এবারে ঠিক করে
দেবে
বুক-কুঁড়ি আর রতিগৃহের আকার,
শ্বাসরোধ
তাসপেটানো অ্যাম্বুলেন্স ওই এলো এলো
কেঁদো না বস্তি, কেঁদো না
ছাপড়ার পুঁইডগা
কুঁজোর পিঠে চেপে খোলসে ঢুকে
যাবে অচৈতন্য
কালো চাপকানে রামনাম লেখা…
পুড়তে চাইছে মোমগুলোতে যে হাত
মাচিস ধরাবে
নুলো পা তাকে আর কতদূর নিয়ে
যাবে!
সেই তো জলকে জল বলি, আগুনকে বলি পোড়াও, পুড়তে পুড়তে…
৫.
জ্বালানির দিকে তাকিয়ে দেখি বেশি আর নেই
ফুঁ দিলে শুধুই ধোঁয়া
অলস চাল ভাত হবে তো!
চোঙায় বারুদঠাসা শিশিরে ভিজে কেলিয়েছে
শলাইয়ের হরিণ স্থির
গোটা দিনের রোদ তাকে ছোটাবে
কি!
পোকারা বেরিয়ে আসছে লাখে লাখে
হাইতোলা রেখে পতাকা ধরেছে
হাতে
জাঠায় যেতে যেতে কী স্লোগান
কী স্লোগান!
অসিদ্ধ চালের দিকে একটা চোখ রেখে বাকিটা ওদের দিকে
উচ্চারণে মিলুক না-মিলুক
পোকাদের পায়ে পায়ে
ভাত পর্যন্ত জ্বালানির কাজ
হয়তো সারবে অশুদ্ধ উচ্চারণ, প্রমিস!
প্রমিস।
৬.
ফুল ফোটাতে একটা ভেজা হাতই এলেমদার
কলিটি ক্লিভেজে রাখো, ঔং
থেকে ওম
কেজো হাত ফুরসতে চলে যাবে বুকে, হৃদয়ে, ভেজা
আলো! সে দেবে আমার চোখ
৭.
শুকনো হাসির ছররা হাওয়ায় ভেসে
মাটিতে ফেলে দিল
কয়েকটা হরিয়ালের লাশ
কষা মাংসের বাটি আরও জোরে হেসে ওঠে
পাতার রং বাঁচাতে পারেনি
যাদের
শাবক তাদের শিস দিতে শিখবে
কার কাছে!
সময়ের হিলিং
একটা কথার কথা
নিকেলিং হয় না
সব ধাতুর ক্ষতে
তুঁতিয়া বুনন
১.
শান্ত
অস্থির
নীলচে
গোলাপি
সজল
রাজসিকী।
উত্তেজক
করণীয়
ঘুমকাতুরে
বকেয়া
শ্রাব্য
সনাতনী।
চিত্রিত
মনোরঞ্জনী।
২.
খরশান
পিপাসিত
অভিলাষী।
পিলে-চমকানো
ধারাবাহিক
শাসনাধীন
শালীন
যোনিজাত
অরূপ
ঠুনকো
ভয়াল
লেখনীয়।
৩.
আনখা
এলোঝেলো
স্বপ্নমূলক
আমিরিও
লেজে-গোবরে
কাছাখোলা
অখলা
আপরুচিতে
হকদার
অনালোড়িত
ক্রিয়মাণ
কাকতালীয়।
শঙ্খদীপ কর
রাজেশ বলুক।
রাজেশ চট্টোপাধ্যায়
উমাদার লেখার ক্ষেত্রে, আসলে কি হয়, কোন লেখা যখন আমরা শুনি, তখন একটা লাইন থেকে তার পরের লাইনে যাওয়ার মাঝে একটা স্পেস থাকে, একটা সুতো ছেড়ে রাখা হয় বলে আমি মনে করি। আমি সেভাবেই কবিতাকে দেখি। সেই
সুতো কতটা ছেড়ে রাখা হবে, সেটা লেখকের ওপর নির্ভর করে। এখানে
যে লাইন লেখা হয়েছে, তার মাঝের যে সুতো, আমার কাছে তার চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে প্রত্যেক লাইনে শব্দগুলির
মাঝে ছেড়ে রাখা সুতো। কারণ এই লেখাগুলো পড়তে গিয়ে কিছু ক্ষেত্রে আমি সেই শব্দের
মধ্যেই আটকে আছি, এরকম একটা ব্যাপার এসেছে। এবং তার পরে যে
লাইন থেকে লাইনের মাঝে ছেড়ে রাখা যে সুতো, আমাকে পুনর্বার
ভাবতে হচ্ছে, আগে উমাদার লেখা যখন পড়েছি, সেগুলোর মধ্যে একটা আবেশ তৈরি হত। কবিতাগুলোর কাছ থেকে আলটিমেটলি কিছু
চাওয়ার বা পাওয়ার থাকত না। কিন্তু আজ এই লেখাগুলো শোনার পরে যেন মনে হল, যেন আরও ভাবতে বলছে, যে এই সুতোগুলো ছেড়ে রাখা আছে,
আরও ভাবো, এরকম কিছু। আরও কনসেনট্রেশন দাবী
করছে এই লেখাগুলো এবং সেক্ষেত্রে এই কবিতায় ব্যবহৃত কিছু শব্দ যে বিশাল ভারী,
বা খুব নতুন শব্দ এমন নয়। খুব স্বাভাবিক সাধারণ শব্দ। শুধু প্রয়োগের
মুনশিয়ানায় সেই শব্দগুলোই এমন, আমার খুব ভালো লেগেছে। আবার
আমার ক্ষেত্রেই আবার, কিছু শব্দ এমন লেগেছে, যা কানে একটু ভারী লেগেছে এবং অতটা ভালো লাগেনি। শেষ এসে উমাদা যে কবিতা
দুটো পড়ল, এরকম লেখা আমি আগে পড়িনি। আগে এরকম একটা ফেসবুকে
ট্রেন্ড এসেছিল। দশ লাইনের গল্প বা তিন শব্দের কবিতা এরকম কিছু। সেই ট্রেন্ড আমার
একদমই ভালো লাগেনি। ওরকমভাবে আমি ভাবতে পারি না। উমাদা যখন পড়ছিল, আমি তখনই ভাবছিলাম, এই ধরনের এক শব্দ দিয়ে রচিত লেখা
আমি গ্রহণ করব কীভাবে। কারণ একটা শব্দের একটা নিজস্ব বিস্তার আছে। উমাদার হয়ত মনে
হচ্ছে এই একটা শব্দ সেটা প্রকাশ করে দিচ্ছে। কিন্তু আমি হয়ত সেই শব্দটার পরেই উমাদা
যে শব্দটা বসিয়েছে সেটা চাইছিলাম না। সজলের পরে গোলাপিটা একদমই চাইছিলাম না। উমাদা
হয়ত এটাই করতে চেয়েছে। দ্বিতীয় যে লেখাটা উমাদা পড়ল শব্দ দিয়ে, কেন জানিনা আমার ওটা ভালো লেগেছে।
স্বপন রায়
উমা যে আবার লিখছে, এটাই একটা দারুণ ব্যাপার। গত এক বছর ও টানা গদ্য লিখেছে। এত গদ্য কাউকে
লিখতে দেখিনি। এখন তো সমগ্র বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লিখছে। আমি সাবধান করেছিলাম,
এত গদ্য লেখা দেখে। তো সেইখান থেকে ফিরে এসে, সেই
গদ্যের ভার পেরিয়ে আবার যে ও কবিতা লিখছে, তার জন্য হ্যাটস
অফ।
রাজেশ চট্টোপাধ্যায়
যে শব্দগুলো আমার ভারি লেগেছে, তা বোধহয় ওই গদ্য লেখারই ফল।
শঙ্খদীপ কর
রাজেশের কথার সূত্র ধরে আমি
একটা কথা বলতে চাই। উমাদা শেষে যে লেখাগুলো পড়ল, তার এক একটা
শব্দের পিঠে পিঠে আমি একটিই শব্দ বসাবো। তাতে খুব ইন্টারেস্টিং একটা আউটকাম আসতে
পারে। একটা শব্দ কেউ সাজেস্ট করো। ধরা যাক, শব্দটা ‘আমি’।
তাহলে দাঁড়াচ্ছে- শান্ত আমি। নীলচে আমি। সজল আমি। গোলাপি আমি। রাজসিক আমি।
উত্তেজকের পর, ধরো ‘তুমি’ বসালাম। তাহলে হবে, উত্তেজক তুমি। করণীয়
তুমি। বকেয়া তুমি। ঘুমকাতুরে তুমি। শ্রাব্য তুমি। সনাতনী তুমি। এক্সপ্লেন করছি না।
এরপরে ধরো ‘আমরা’। তাহলে, চিত্রিত আমরা। মনোরঞ্জন আমরা।
উমাদা যখন প্রথম বলল যে আমি
একটা শব্দে কবিতা পড়ছি, তখনই কিন্তু আমি একটা শব্দ, ‘আমি’ ‘তুমি’ ‘আমরা’ ছাড়াও, মনে মনে বসিয়ে নিয়েছিলাম।
শুনতে শুনতেই বসাচ্ছিলাম শব্দ। বসাচ্ছিলাম আর বিস্মিত হচ্ছিলাম। উমাদার লেখায় একটা
জাম্পকাট, যেমন দেবাঞ্জন দা বলছিল, সেটা
থাকে। সেই জাম্পকাটগুলো কখনও নিতে অস্বস্তি হয়। যেন একটা আবহ তৈরি হতে না হতেই তার
ওপর রেলগাড়ি চালিয়ে দেওয়া। (উদাহরণ) এই যে “বোড়ে কোথায় বোড়ে” একটা ইউ টার্ন,
মানে একটা কবিতা পড়তে পড়তে আমি একভাবে রিলেট করলাম। এবং তারপরেই
আবার অন্যভাবে রিলেট করলাম। এই জায়গার একটা দারুণ মজা হচ্ছে, নাঙ্গা রাজা ও ন্যুড কুইনের পরে যে বোড়ে, কীভাবে এলো,
এই রাজেশ বলছিল না একটা সুতো, এইখানে এসে যে
স্পাইরাল বেন্ডটা, এই জিনিসটা উমাদার লেখায় বারবার আসে,
যেখানে সোজা যেতে যেতে না দেখা একটা ইউ টার্ন আসে। গাড়িটা চকিতে
ঘুরে যায়। এই স্পাইরাল বেন্ড উমাদার লেখার একটা বৈশিষ্ট। এই জায়গাটা আমার ভালো
লাগে।
তন্ময় কুমার মণ্ডল
উমাদা প্রথম কবিতায় বিভিন্ন নাম
ব্যবহার করেছেন। পাহাড় হতে চাওয়া বিলকিস বেগম, এই জায়গাটায়
ধাক্কা খেয়ে উঠেছিলাম প্রথমেই। পরের ধাক্কা, হতে পারে কয়েকটা
সর্বনাম। এই সর্বনাম শব্দটা আমাকে দুভাবে ধরা দিয়েছে। সব নাম। এবং সর্বনাম। দারুণ
লেগেছে। কাল উমাদা যেমন ধ্বনি নিয়ে বলছিলেন, ঠক ঠক, হঠাত টক। ঠুকঠাক, তারপরেই টুক। ঠুন ঠান ধ্বনি,
তারপরেই টুনটুনি এসে ছবি। আমি ভাবছি ধ্বনি আসবে, এলো ছবি। ভালো লেগেছে। এবার আমি যাবো শেষের দুটো কবিতায়। আমি একসময় গ্রুপ
ডিসকাশনে বলছিলাম, যে আমি মনে করি- আমরা পাঁচটা ইন্দ্রিয়
দিয়েই ভাবতে পারি। অতএব, আমাকে পাঁচটা ইন্দ্রিয় দিয়েই ভাবতে
হবে। একটা শব্দ যখন আমি শুনি, তখন আমার মধ্যে ছবি আসে।
যেকোনো শব্দেই যেকোনো ছবি তৈরি হতে পারে। আমার মনে হয়েছিল, দুটো
বা তিনটে সম্পুর্ণ ভিন্ন জাতের শব্দকে পাশাপাশি
বসিয়ে দিলে একটা ছবি হতে পারে। এই জায়গায় আমার সেটা মনে হয়েছে। পিপাসিত, একটা ছবি। অভিলাষী, তার ঘাড়ে একটা ছবি। যে ছবি আসছে,
তার বাইরে আরেকটা ছবি আমার কাছে ধরা দিচ্ছে। তারপর, শান্ত, অস্থির, নীলচে, গোলাপি, এই নীলচে আর গোলাপিকে কাছাকাছিও রাখতে
পারছিনা। আবার দূরত্বও বলতে পারছিনা। কোথায় সজল আর কোথায় রাজসিক! সজল এক অন্য ছবি।
আবার রাজসিক এক অন্য। ওই যেতে গিয়ে মাঝখানের যে লাফটুকু আমাকে দিতে হচ্ছে পাঠক
হিসেবে, ওটাই একটা আলাদা আনন্দ। সজল বা রাজসিকে আনন্দ
পাচ্ছিনা। লাফে আনন্দ পাচ্ছি। উত্তেজক, করণীয়। লাফটাই আনন্দ।
এটা একটা আলাদা জার্নি। তার জন্যেই উমাদা হয়তো আলাদা করে পড়েছেন। তবে এই শব্দগুলো
পরপর বসালেই এরকম হবেনা কিন্তু। এটা, আমার মনে হয়, বহু ভাবনার ফসল।
জয়দীপ মৈত্র
প্রথমেই স্বপন দা যে কথাটা
বলেছিল, সেই কথাটা আমি বহুবার বহুভাবে উমাদাকে বলেছি যে গদ্য লিখো না। তো তারপরে,
স্বপন দা যা বলল সেটাই। আর রিপিট করছি না। আর দ্বিতীয় কথা, খুব অনেস্টলি বলছি, আমি এখনও উমাদারই লেখা বই
শিরোনামহীন পুতুল নিয়ে পড়ে আছি। ফলে এই কবিতাগুলো নিয়ে আমি যদি এখন বলতে চাই,
আমার ক্ষেত্রে সেই বলাটা নকল হবে। আমি সেটা বলতে চাইছিনা। আমি তাই
এই কবিতাগুলো পার্সোনালি আবার উমাদাকে পাঠাতে বলব। কারণ এখন এই কবিতাগুলো নিয়ে
বলতে বা ভাবতে গেলে অবচেতনেই একটা তুলনা চলে আসবে। আমি সেটা চাইছিনা।
আর তিন নম্বর যে জায়গাটা, এক শব্দের কবিতাগুলো, এটা শঙ্খদা যেভাবে এক্সপ্লেন
করেছে আমার কাছে সেটা অসাধারণ একটা জায়গা। তো, আমি চমকে
গেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম এই এক শব্দের লেখাগুলো নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না,
তবু এটাই আমার তিন নম্বর পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ালো শুধুমাত্র শঙ্খদার ওই
বলাটুকুর জন্য। আরেকটা লেয়ার তুলে ধরার কারণে।
উমাপদ কর
সঞ্চালক হিসেবে আমি এই সেশন শেষ
করছি। এরপরে রেহেলের যে টিম, তার পক্ষ থেকে আমি
শঙ্খদীপ করকে আহ্বান জানাচ্ছি, গোটা ক্যাম্প ও তার
চিন্তাভাবনা সম্পর্কে তার যে চাহিদা এবং আমরা যারা অংশ নিলাম তারা কতটুকু রাখতে
পারলাম এবং প্রয়োজনে থ্যাংকস ইত্যাদি জানিয়ে এটা শেষ করার। আর আমার এক শব্দের
কবিতাগুলো মূলত এক্সপেরিমেন্টাল একটা লেখা। প্রত্যেকটি শব্দ হচ্ছে বিশেষণ। বিশেষ্য
নিয়ে কবিতা হয়েছে বহু। সর্বনাম নিয়েও হয়েছে। এখানে যে শব্দ ব্যবহার হয়েছে তা
বিশেষণ।
চিত্তরঞ্জন হীরা
বহু আগে বিজলি গ্রিলের বিজ্ঞাপন
দিত পেপারে মনে আছে? জন্ম থেকে মৃত্যু এক শব্দে। যেমন
সন্তান, স্কুল, বিয়ে ইত্যাদি। শ্রুতির
কবিরা এক শব্দ দিয়ে কবিতা লিখত সেসময়। উমাদা যে কাজটা করেছে, তাদের ওই এক শব্দ দিয়ে একটা লাইন, এই শব্দের মধ্যে
একটা উপলব্ধি কাজ করছে। একটা বোধ কাজ করছে। ওদের কাজ থেকে এই কাজটা তাই ডিফারেন্ট।
শঙ্খদীপ কর
তোমরা এসেছো, অনেক অনেক ধন্যবাদ। তোমরা না আসলে আমাদের ক্যাম্পটাই হয়না। এরকম একটা
পরিকল্পনা করার পর একটা সন্দেহ থেকেই যায় যে আমরা শেষ পর্যন্ত ক্যাম্পের মধ্যে
থেকে একটা পত্রিকা দাড় করাতে পারি কিনা। আমরা তার জন্যে ভেবে রেখেছিলাম যে যদি
পত্রিকা হয় তো হবে। নাহলে হবেনা। এটা দরকারি নয়। কিন্তু এই দুদিনের পর এখন আমার
মনে হচ্ছে, রেহেলের চতুর্থ ইস্যুটা হতে পারে। আমরা ভেবেছিলাম
এটাই, যদি হয় তো হবে। নাও যদি হয়, আমরা
ক্যাম্পটা এনজয় করব। ক্যাম্পটা এনজয় করেছি। খুব খুব ভালো লেগেছে।
তোমরা এসেছ, থ্যাংকস বললে খুব কম বলা হবে। স্বপনদা সেই সুদূর ব্যাঙ্গালোর থেকে,
এত শরীর খারাপ নিয়ে। দেবাঞ্জন দা আর পার্থ দাকে একদম শেষ মুহূর্তে
জানানো হয়েছে। যেভাবে তোমরা এসেছ, যেভাবে কবিতা নিয়ে
খোলামেলা কথা বলেছ, তোমাদের পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগলো।
মনোজ এসেছিল বাঁকুড়া থেকে। ভোরবেলা প্রায় চারটের সময় বেরিয়ে। রাস্তা খারাপ। খুব
ভালো লাগল। আর, একটা, হয়না যে কিছু জিনিস
মনে দাগ কেটে যায়? আমার কাছে অন্তত এই ক্যাম্পটা খুব দাগ
কেটে যাওয়ার মত হল। আমি কাল রাতে থাকতে পারিনি। বাড়িতে গিয়েও যতক্ষণ না আমি ঘুমিয়ে
পড়েছি, ততক্ষণ আমি মিস করেছি, প্রতিটা
মুহূর্ত। না গেলেও হত না, পরিস্থিতি এমন ছিল। ভবিষ্যতে কখনও
যদি তোমাদের কাজে আসতে পারি, ভালো লাগবে। তোমরা আমাদের
এভাবেই ভালবাসবে, এই আশা।
উমাপদ কর
রেহেল, যদি আরেকটু নিয়মিত হতে পারে, লম্বা প্রজেক্ট সহ অন্ততপক্ষে বছরে যদি দুটো সংখ্যাও করতে পারে, আমি খুশি হব। আজকে টিমের সবার সামনেই বলছি। দ্বিতীয়ত, অপরজন ওয়েব সংখ্যা কিন্তু খুব পুরনো নয়। মাত্র এক বছর। অপরজন যে রিডার পেয়েছে, রেহেল এখনও অতটা পায়নি। রেহেল যদি আরেকটু নিয়মিত হয়, ভাল হয়। রেহেল যে কাজগুলো করে, এটা কিন্তু সচরাচর কেউ করে না। তো রেহেলের এই অভিনবত্ব, এটা চালু রাখার জন্য আমি রেহেলের প্রত্যেক সদস্যকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করব, যতটা তারা পারে, সময় দিক। হ্যাঁ আমি ধমকাই। ভালবাসার লোক ছাড়া কাউকে আমি ধমকাই না। সুতরাং আমি চাই রেহেল বছরে দুটো হোক। এবং যেটা করতে গেলে এই যে পরিকল্পনা, ক্যাম্প থেকে পত্রিকা, আমরা দেখেছি ক্যাম্প থেকে প্রতিবেদন, কৌরবে দেখেছি, হয়, কিন্তু একটা ওয়েব ম্যাগ হয়? ক্লিক করে গেল হবে। তাই আমার অনুরোধ, রেহেল যেন আরেকটু নিয়মিত হয়।
Post a Comment