Recent Blog Posts

কবিতা নিয়ে দু-দিনের ক্যাম্প। প্রচুর ইন্টার‍্যাকশন, গ্রুপ ডিসকাশন, কবিতা পড়া, তার আলোচনা, কবিতাকেন্দ্রিক গদ্য এবং আরও অনেক অনেক কিছু। আর তারই নির্যাস নিয়ে এই রোয়াক সংখ্যা।

রোয়াকে
কবিতা পড়লেন মনোজ দে
আলোচনা করলেন সমীরণ ঘোষ, চিত্তরঞ্জন হীরা

সূত্র ধরলেন উমাপদ কর

আজ ভোর চারটের সময় ঘর থেকে বেরিয়েছে মনোজ। একটা ডাকে, একটা আহ্বানে, বাঁকুড়া থেকে এসেছে। রাতেও বোধহয় ভাল ঘুম হয়নি। এই যে কবিতার প্রতি একটা মানুষের টান, আমি তাকে অভিনন্দন জানাই। মনোজও খুব বেশি লিখছে না। কিন্তু মনোজের প্রথম বইটা পড়ে আমি চমকিত হয়েছিলাম এবং ওকে কিছু কথাবার্তাও বলেছিলাম। মনোজের বোধহয় দুটো বই প্রকাশ পেয়েছে। ও আমাদের ধারাবাহিক আবহমান বাংলা কবিতার প্রথাগত গড্ডালিকার বাইরে গিয়ে লেখার চেষ্টা করে এবং, আমার বিচারে খুব প্রথমদিকে সামান্য কিছু প্রভাব থাকলেও ও এখন নিজের একটা স্বর খুঁজে পাচ্ছে। এই সার্চ তো কখনো ফুরোয় না। ফুরোবেও না। এমনকি আমি, স্বপন, চিত্ত, সমীরণ অনেকদিন ধরে লিখছি। দেবাঞ্জনও অনেকদিন ধরে লিখছে। আমাদের সার্চ ফুরোয় না। মনোজ তার কবিতায় কী করছে না করছে, আমরা সবাই এখানে সমানভাবে ওয়াকিবহাল নই। আমি মনোজকে আহ্বান জানাব কবিতা পড়তে। সে যেমন তার পুরনো কবিতা কিছু পড়বে, সেরকমই তার সদ্য রচিত বা অপ্রকাশিত কবিতাও পড়বে। মনোজ এবার কবিতা পড়ুক। 

 

মনোজ দের কবিতা

 

পিছুটান

১.

তারও কেউ আছে

 

এ ডিসেম্বরে স্নানের জন্য জোরাজুরি

সময়ে খেয়েছ কিনা; অন্ততঃ সপ্তাহে একদিন

বকাঝকা                          মুহূর্তে আদর

 

এই সামান্যের জন্য 

তোমায় ফিরিয়ে আনা বিলাসিতা মনে হয়

 

২.

এই অপেক্ষার শেষ বলতে অন্ধকার

 

আর, তুমি তো জানোই

অন্ধকারে আমার হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে যায়

ক্রমশ চঞ্চল হয়ে উঠি, শিহরিত

 

মনে পড়ে

উত্তুরে হওয়ায় কেঁপে ওঠা বেনামী বন্দর

 

৩.

গতি প্রায় নেই

বন্দরে ঠেকেছে জাহাজসমগ্র

তবু যদি প্রলোভন আসে

তাই, বেঁধে রাখা ভালো

 

তুমুল চিৎকার

বহুদূরে অতীতের উত্তেজিত আলো

তোমাকে যে টানেনি, তা নয়

 

ঢেউ বাড়ে, বলেছ জোয়ার

 

আগামী রোববার

ফের শোকসভা, কফি, কবিতা সাজানো

 

৪.

কেউ আসেনি, একথা মিথ্যে

 

যত্ন, যৌনতার পাশে

সে দৃশ্য মেলাতে গিয়ে দেখি

 

প্রয়োজন। বড্ড প্রয়োজন

গোপনে, তোমায়, আগামী বইয়ের ভূমিকায়

 

 

জন্মদিনের ক্ষত

শুভেচ্ছাও একধরনের ক্ষত

 

ওজন, সন্দেহ উভয়ই বেড়েছে বহুদিন

দেখা নেই। বিষাদ সংবাদ

 

তবুও দূরের জনপদে ফুটে ওঠে আলো

 

যেটুকু বিকেল, অবশিষ্ট শীতের মহড়া

একমাত্র তোমার জন্মদিনেই সূর্যাস্ত ভাল্লাগেনা

 

বিয়োগ

যেহেতু শাশ্বত বলে কিছু নেই 

মিথ এক উজ্জ্বল মিথ্যে 

এ শহর। তোমার সংকেত

                  জানি ফিরে যাওয়াটাই রীতি 

 

আমাদের একটাই বিচ্ছেদ 

অথচ আলাদা আলাদা কবিতা লিখছি

 

সেলাই মেশিন

মাঝে মাঝে বিরক্তিও আসে 

টানা ব্যবহার। জীর্ণ, বৃদ্ধ তুমি

 

অথচ আত্মীয় আরামদায়ক 

 

প্রিয় সেলাই মেশিন 

আমরা দাগ গুলো দেখি 

উচু হয়ে থাকা টুকু 

                    তোমার অমসৃণতা

 

কুয়ো এবং কুয়োতলা

১.

কুয়ো এবং কুয়ো। দুটি ভিন্ন অঞ্চল আমাদের বাড়িতে। কুয়োকে দেখি আস্ত এক সীমানা ধারণ করে আছে। আমাদের এবং পাশের বাড়ির। গতবছর তীব্র গ্রীষ্মে কুয়োর জল শুকিয়ে গেলে, সালিশি বসেছিল। যেন বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া মা, ছেলেরা ঋতু বসিয়ে ভাগ করে নেয় 

 

২.

কুয়োতলা অথচ কুয়ো নেই। ঠাকুরদাদার আমলে এখানে কুয়ো ছিল, শুনেছি। বছর দুই আগেও গ্রীষ্মের দুপুরে আমরা কুয়োতলায় বসে লুডু খেলতাম। গল্প শুনতাম। এখন আর লুডু খেলি না। বসি না কুয়োতলায়। কাঁঠালগাছটাও নেই। অনেকদিন কেউ চিৎকার করে বলেনি, আর। চার-পাঁচটা সাইকেল আর একটা বাইক এখন কুয়োতলা আগলে

 

চোদ্দ বছরের সদ্য বিবাহিতা মেয়ে স্বামীর স্নানের জন্য এখনও স্মৃতি থেকে জল তুলে। আমরা ঠাকুমা বলি 

 

জন্মদিন

সাজিয়ে রেখেছ ছুরি 

নিকটস্থ কেক। খুন হবে বলে 

প্রতিটি হত্যার মুহূর্তেই 

আলো নিভে যাওয়া আবশ্যিক

###

 

উমাপদ কর

মনোজ কবিতা পড়ল। মনোজের চেয়ে একটু বয়সে বড়, তন্ময় মণ্ডলকে আমি বলছি ওর কবিতা নিয়ে কিছু বলুক।

 

তন্ময় কুমার মণ্ডল

এর মধ্যে মনোজের কিছু কবিতা আমি পড়েছি। মনোজের প্রথম কয়েকটা কবিতা, মনে হয় নতুন। মনোজের কবিতা ব্যক্তিগতভাবে আমার ভালো লাগে। ওর একটা বই আমার কাছে আছে। তো ছোট ছোট কবিতায় ওর অনেকখানি বলা থাকে, যেটা ভালো লাগে। যেমন তোমার জন্মদিনে সূর্যাস্ত ভালো লাগেনা। চমকে দেওয়ার মত একটা লাইন। খুব ভালো লাগার লাইন। তাছাড়া শেষে যেটা পড়ল, খুব অসাধারণ একটা কবিতা। আমার খুব প্রিয় কবিতা ওটা। জন্মদিনে খুন হওয়ার দৃশ্যের কথা যে ভেবেছে, সেটা অসাধারণ একটা জায়গা। আর, তাছাড়া তেমন কিছু বলার নেই। তবে আমার যেন প্রথম কয়েকটা কবিতায় মনে হচ্ছিল, যেন, শব্দ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেনা কবি। শব্দের মধ্যেই যেন আটকে আছে। এটুকুই।

 

স্বপন রায়

আমরা একটা মজা করি। কবিতা নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে আমরা একটা সিচুয়েশন কল্পনা করি। ধরি জয়দীপ, আলোচক, সে এই আস্থেটিক কোয়ালিটিগুলো জানেনা। একটা কবিতা, তার প্যারামিটার, কীভাবে তাকে বিচার করবে, তার কী আছে না আছে, কিছুই সে জানেনা। সমুদ্রের ধারে হাঁটছে। বোতলে বন্দী অবস্থায়, প্রায় পাঁচশ বছর পরে মনোজের এই কবিতাগুলো ভাসতে ভাসতে তার কাছে এলো। এবং সে পড়ছে। দুনিয়া পালটে গেছে। ওই কবিতাগুলো তখন কী অভিঘাত আনতে পারে তা আমরা কল্পনা করতে পারি। এই খেলাটা খেলতে পারি। তখনকার হিসেবে হবে, ভাষা অনেক পুরনো। কবিতা জানেনা, কিন্তু ভাষাটা কমিউনিকেট করতে পারছে। শরীরে থাকা কোন চিপ দিয়ে সে ডিকোড করতে পারছে। এবং ও কিছু আবহ পাচ্ছে। এবং তা দিয়ে ওর মধ্যে যে নন্দনতত্ত্ব তৈরি হচ্ছে, তা ইউনিক। এতক্ষণ ধরে আমরা যা বিচার করছি, তা আমাদের মাথার মধ্যে গেঁথে আছে, যা আমরা জানি, যে এই কবি খুব সূক্ষ, তার অনুভব এত সুতীব্র, তা আমাদের শেষ লাইনে বিদ্ধ করছে। এই কবি লিরিকাল। আমাদের আটকে রাখছে। এই কবির সামগ্রিক চেতনার সংকোচন এত পারফেক্ট, ইত্যাদি জয়দীপ কিছুই বোঝেনা। তাহলে সে কী দিয়ে ঢুকছে কবিতায়? কিন্তু তার ভালো লাগছে। আমরা যদি এই ভালোলাগাগুলো আইডেন্টিফাই করতে পারি, তখন একটা সমালোচনার নান্দনিক পরিভাষা আমরা পেতে পারি। ওর কবিতায় একটা কেক কাটার কথা ও বলেছে। একটা কেক কাটা, অদ্ভুতভাবে, একটা লোক সেদিন মরে যাচ্ছে এক বছর। একটা অন্ধকার নেমে আসছে ও তাতে আনন্দ বয়ে যাচ্ছে। পাঁচশ বছর পরে একটা লোক, জয়দীপ, ওটা পড়ে ওর মধ্যে একটা নান্দনিক অনুভূতি সৃষ্টি হল, যে এক লহমায় ও পড়ে জন্ম মৃত্যুর শিহরণ অনুভব করল। এই শিহরণ ও কবিতায় বয়ে নিয়ে গেল। এই যে তরঙ্গ ও সৃষ্টি করল, এই যে অনুভব ও সৃষ্টি করল, এটা চিরকালীন। এটা আজও করছে, পাঁচশ বছর পরেও করবে। এটাই কবিতার কাজ। কবিতার আর কোন কাজ নেই। কবিতার আর কোন ব্যাখ্যা হয়না। ওর কবিতায়, পাঁচশ বছর পর যখন কেউ পড়বে, শুভেচ্ছা এক ধরনের ক্ষত। ওজন সন্দেহ উভয়ই ...আলো...সূর্যাস্ত (টাইপ হবে) ... তখন তার এই আস্থেটিক ভালো লাগার কোন ব্যাপার নেই। একজন প্রেমিকার জন্য সূর্যাস্ত তার ভালো লাগছে না, এতে তার কিছু না এসেও যেতে পারে। কিন্তু, তবুও দূরের জনপথে ফুটে ওঠা আলো, এটা একটা আবহ হতে বাধ্য। তারপর তো প্রেমিকা সূর্যাস্ত জন্মদিন ইত্যাদি। কিন্তু হয়তো এই দূরের জনপথের ছিদ্র দিয়ে সে ঢুকে যাবে। তরঙ্গ সৃষ্টি করবে। চেতনার সেই কণা পাঁচশ বছর পরে অভিঘাত সৃষ্টি করছে। তাহলে কি পালটা এক নান্দনিক আলোচনায় আমরা যেতে পারি? যে প্রত্যেক কবিতা দিয়ে আমরা দেখতে পারি? কবিতার শেষ লাইনের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ অংশটা, সূর্যাস্তের কথাটা, সেটা বাদেও কি আর কিছু আছে? আমরা কবিকে প্রশ্ন করতে পারি, দূরের জনপদে আলো, ও তার সাথে সূর্যাস্ত ভালো লাগেনা, এটা তুমি কীভাবে আনলে! কবির তো একটা লজিক থাকে। লজিকাল ক্র্যাক থাকে। সেসব তাত্ত্বিক আলোচনায় যাচ্ছিনা। কিন্তু একটা সম্পর্ক আছে। এই যে ক্রিয়েট করা সম্পর্ক। এই তাত্ত্বিক আলোচনায় না গিয়েও, ঘটনা তো এটা, ওই দূরের জনপথে আলো না এলে সূর্যাস্ত না ভাল লাগার কথা আসতো না। এখন আমি কবিকেই বলি, এই যে এই জায়গাটা, মনোজকেই বলি, তুই নিজে একটু বল তোর এই জায়গাটার ব্যাপারে। এইভাবে আলোচনা করলে আমার মনে হয় ভালো হবে। ভালো লাগল না খারাপ, সেই একঘেয়ে জায়গার বাইরে কোথাও।

 

মনোজ দে

আমি ওভাবেই লিখতে চেয়েছিলাম। একটা দৃশ্য, একটা আলো, যা আমার থেকে দূরে, নান্দনিক তবু আমার কাছে নান্দনিক নয়। দূরের জনপথের কাছে এই আলোটা প্রাসঙ্গিক। কিন্তু যেহেতু আমার কাছে জন্মদিন ফুরিয়ে আসছে, তাই আমার কাছে তা আর প্রাসঙ্গিক নয়।

তার জন্যেই এই লাইনটা লিখেছিলাম। ওই লাইনটা না এলে এই লাইনটা আসত না।

 

চিত্তরঞ্জন হীরা

এই কবিতাটার প্রথম লাইনটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি হন্ট করেছে। এবং ওই দূরের জনপথে আলো, এই লাইনটার প্রতি টানটা কিন্তু শেষ লাইনের চেয়েও বেশি হয়ে রয়েছে। যদি কবিতাটা শেষ করত, দূরের জনপথে আলো, একটা স্পেস দিয়ে।

 

স্বপন রায়

দূরের জনপথে আলো ছুঁয়ে শেষ তিনটে লাইনে ঢুকে যাওয়া, এটাই ওর মুনশিয়ানা। তার জন্য কংগ্রাচুলেট করছি।

 

চিত্তরঞ্জন হীরা

প্রসঙ্গক্রমে বলি, মনোজের কবিতা কিন্তু রাজেশের চেয়ে অনেক ম্যাচিওর বলে আমার মনে হয়েছে। অনেকটাই ম্যাচিওর। একেকটা লাইন শোনার পর অনেকক্ষণ ধরে ভাবার অবকাশ, ছবিটা ভিসুয়ালাইজ করার অবকাশ তৈরি হয়েছে।

 

দেবাঞ্জন দাস

ম্যাচিওর মনে হয়েছে কারণ মনোজের কবিতায় যে ক্রিয়াপদের ব্যবহার এবং রাজেশের কবিতায় যে ক্রিয়াপদের ব্যবহার, আসলে রাজেশ ক্রিয়াপদের ব্যবহার নিয়ে কনফিউজড। রাজেশ দুটো সেগমেন্টে কবিতা পড়ল। যখন ও মহাভারত পড়ল, তখন একরকম। যেটা ও নতুন সিরিজ বলছে। তার আগের সিরিজে অন্যরকম। ও এখনও ডিসাইড করেনি যে ওর কবিতায় ক্রিয়াপদের ব্যবহার ও কোন জায়গায় রাখবে। যেটা মনোজ সামহাও কনস্ট্যান্ট ওয়েতে ক্রিয়াপদের ব্যবহার রাখে। সেই কারণে এই ডিফারেন্স।

 

স্বপন রায়

আসলে মনোজের কবিতা খুব গোছানো।

 

উমাপদ কর

এবার আমি একটু বলি। তোরা তো খুব প্রশংসা করলি। মাস্টারি করা তো আমার স্বভাব তোরা বলিস। মাস্টারিটা, কোনদিন মাস্তানি হয়ে যাবে আমি জানিনা। হ্যাঁ কবিতা নিয়ে মস্তানি আমার আছে। যে কবি তার এগারোটা কবিতার মধ্যে সাত আটটা কবিতা যেগুলো পড়ল, আমি আইডেন্টিফাই না করেই বলছি, ও ঠিক টের পাবে কোনগুলো, তার পরে যে বাকি চার পাঁচটা কবিতা ও পড়ল, এত অথচ, তবুও, যেহেতু, এত বেশি ব্যবহার করেছে, কবিতা প্রকরণের ক্ষেত্রে যে মসৃণতার কথা বলা হচ্ছে, এই শব্দগুলো লজিক প্রতিষ্ঠার দিকে যে যায়, সেই লজিক প্রতিষ্ঠা কবিতার ক্ষেত্রে আনা কত প্রয়োজনীয়, আমি কবিকে ভেবে দেখতে বলব।

 

সজল দাস

কিন্তু এই শব্দগুলো দিয়ে সবসময় লজিক প্রতিষ্ঠা হচ্ছে তা তো নয়।

 

উমাপদ কর

এখানে আমার মনে হয়েছে, হয়েছে। আমি এটা শুধু কবির জন্য বলছি। সবার জন্য যে বলছি, তা নয়। একটা কবি একটা ফেজে, একটা মনন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকতে থাকতে দু তিন রকম কবিতা কীভাবে লেখে? এটা কিন্তু তার নিজস্ব ভাবনা। তার যে চিন্তাচেতনা থেকে কবিতার উৎসার হয়, বা স্পার্ক, বা ট্রিগার করে, যখন সে সচেতনভাবে নির্মিতিতে আসে, তখন তো সে ঘোর তার মধ্যে থাকার কথা নয়। ঘোর না কাটালে তো শব্দমোহবন্ধন তার আসবেই। যেটা বলা হচ্ছে রিজেকশনের কথা। আমি নিগেশন শব্দটা ব্যবহার করছি। এই নেগেশনটা, আমাদের শিখতে ১৫ বছর লেগেছিল। মকশো পিরিয়ড। আজকের কবিরা তা লাগেনা। তারা এত ইকুইপড, তারা এত নিজদের তৈরি করে নামে, যে তখন তাকে ভাবতে হয় যে সে কোনগুলো বাতিল করবে। এটা আমার বিশ্বাস থেকে বলছি। মনোজের ওই যে চার পাঁচটা কবিতা, আমার মনে হয়েছে এই জায়গাগুলো ওর মধ্যে একটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে, কবিতার যে চেতনাকে সে প্রসারিত করতে চায়, সেই প্রসারণ সেখানে ঘটেনি। না ঘটার ফলে, এই যে একটিমাত্র পঙক্তির যে ব্যপ্ততা, তা ওই কবিতাগুলোর ক্ষেত্রে ধরা পড়েছে বলে আমার মনে হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনোজকে বলব, এটা কোন নির্দেশিকা বা স্কুলিং নয়, খারাপ লাগা থেকে বলা, শোনা থেকে বলা, যে এগুলো নিয়ে ভাবার প্রয়োজনীয়তা আছে। একটা কবি যখন ম্যাচিওরিটির কাছাকাছি আসছে, তখন তার নিজের প্রতি সে আরও নির্মম হতে না পারলে আস্থেটিকস তৈরি করতে গিয়ে যদি আরোপিত আস্থেটিকস হয়, তাহলে কবিতার প্রাণটা বিচ্যুত হয়। কবিতার প্রাণভোমরা বিচ্যুত হলে পাঠক সেখান থেকে রসগ্রহণ করতে পারেনা। কবিতা হচ্ছে আসলে দশ রসের সমাহার। এগুলো নিয়ে মনোজ যদি ভাবে, যদি চিন্তা করে, আমার মনে হয়, ভালো হবে।

 

শঙ্খদীপ কর

আমার যেটা মনে হয়েছে, এখানে রাজেশ ও মনোজের সামান্য হলেও একটা তুলনামূলক কথা এসেছে। এটা হয়েছে, রাজেশের কবিতা শোনার পর, মনোজের লেখা শোনার জন্য। মনোজের মধ্যে একটা দৃশ্যনির্মাণের প্রবণতা আছে। যেটাকে ঠিক গল্প বলা যায়না। কিন্তু যা দৃশ্যনির্মাণ করে। কেক কাটা, কুয়োতলা, দূরের জনপদে আলো, যেকোনো একটা চেনা দৃশ্যের কাছে আমাদের নিয়ে যায়। যা লিরিকাল ভঙ্গীতে আসে। এজন্য কী হয়, খুব সহজে টাচ করে যায়। অন্যদিকে রাজেশের দৃশ্যনির্মাণ, সেভাবে নেই। ও একটা দৃশ্য নির্মাণ করে এবং পরের লাইনেই ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত, সেটা ভেঙে দেয় বা ভেঙে যায়। দৃশ্যটা পুরো নির্মাণ হওয়ার সুযোগ পায় না। এটারও একটা মজা আছে। যেন সিগারেট ধরানোর আগেই লাইটার নিভে যাচ্ছে। সিগারেট ধরলো কি ধরল না, দেখা যায়না। তাই শুধু কানে শুনে রাজেশের কবিতা মনের মধ্যে কোনও দৃশ্য তৈরি করেনা। ফলে সহজে ভালো লাগে না। এক্ষেত্রে চট করে ভাল লাগার মত আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতার জায়গাটা ছুঁয়ে যাওয়া নেই। মনোজের ক্ষেত্রে, আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতার বহু জায়গা বহু দৃশ্য ছুঁয়ে যাওয়া আছে। যা খুব সহজে রিলেট করতে পারছি। এই রিলেট করার জায়গার জন্যেই মনোজের কবিতা শুনে খুব ভালো লাগছে। শেষের কবিতাগুলোর মধ্যে ওই দৃশ্যনির্মাণটা বেশি পরিমাণে আছে। দুজনের কবিতাই আমার ভীষন ভালো লেগেছে, দুজনে দুরকম ভাবে ভালো।   



Post a Comment from facebook

Post a Comment from Blogger