সূত্র ধরলেন উমাপদ কর
এবার কবিতা পাঠ করবেন কবি স্বপন রায়। স্বপন রায়
সম্পর্কে আলাদা করে কোনও ভূমিকার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তাই স্বপনকে সরাসরি
কবিতা পড়তে বলছি।
উদাসীন মল্ট
১.
ফিরে যেতে চাইনা। যে দরজাটা খুললে খুশিই হত পানামা টুপির ধীকার, অ নিয়ে
সৌরাষ্ট্র চলে গেল, অফস্টাম্প নিয়ে বারোদা। টুপি শাদা ব’লেই কালো হয়নি, আমাদের
মুখে ক্রিকেট দিল এত রোদ, শীতটোকা পৌষে
দুটো দলেই ছিল, আছে হাওয়াবরদার। পিচ কখনো ম্যাটে, কখনো ওপড়ানো উইকেট হয়ে মনপসন্দ।
চারুবাক চার্বাককে হাসায়, মিড-উইকেট কনফারেন্স মানেই তো এই, মাঝে মাঝে দেখা,
মধ্যিখানে ধু ধু বালুর চর
যে যার মত ফিরে যাচ্ছে স্টান্স নিতে
অপেক্ষা করতে
২.
হয়না ব’লেই ফেরা হয়নি। তাতে দুটো পাতার ক্লিক্। অগর মগর কুঁড়িরা। ফেরা যদি
হয়, নির্জন সেতু কেন?
লম্বা একটা লোক, তার ছায়া
জলকে করছে তিরতির
কিভাবে যেন নিশ্বাস আলগা করে বুনে দিচ্ছে
চায়ের সুখ
পাতার দুঃখ
আর জল এসব মেখেই তো তিস্তা, কবে থেকে
যাচ্ছে, চলে যাচ্ছে
ফিরছে না
না হয়, দেখার বাহানা ফুলকে ছুঁতে ছুঁতে
কারো না কারো বাহানায় চলে গেল
আমি
আর কোনভাবেই সেই বাগানের পাশে খয়েরি হবো না
বা কালো দরজাটা
চিতা থাকতে পারে, বা হঠাৎ লটকে দেয়া নোটিস
সেতু নড়ে ওঠে
একা কে যেন ফিরে যায় লম্বা হাহাকার নিয়ে
চা-পাতাদের নিয়ে
৩.
চোখ মেললাম, সকাল
দেখে দ্যাখে
চোখের আর কী করার আছে, চেয়ে চায়
গড়ে ওঠে ভাবনাপিরিচ
নাকি পেয়ালাকুহক
চাওয়া সরাসরি তো সকালও শাদা
ভাবনা তিলমাত্র রোদ
যুক্তি মাত্রা অতিরিক্ত দেয়
কৃষি দেয়
তার পিঠে কার কার রোদ্দুর
সে পিরিচে কুহক মেশায়
পেয়ালায় ভাবনা
শস্য খেলা করে শুধু শস্য খেলা করে
৪.
চোখ জ্বলে
ব্যবহার লেগে থাকে
বারান্দাও গাউনের প্রান্তে লেগে থাকা সূঁচের কারুকাজ
থাকে পাশাপাশি দেখে কিভাবে ফুরিয়ে যাচ্ছে
আবছা ব্যবহৃত চশমা
যা দেখেছিল রেশম দেখেছিল দাহ্য গুটিপোকা
সে তো প্রান্তর
গাউনের সেইতো সাঁকো
কে আর কাজের দিনে পেরোবে
মিলন মিলন
শব্দটা মনে পড়ল?
৫.
অনুমানে একপিস, সান্দ্র কমলাতেও, ছিঃ বলল
রেউরে মিশলো সন্ধ্যার টকি
বি
রতির আগে
এ
এম্মা
এ তো সেই ঘোর লাগা ঘের সারাটিজীবন হয়ে কাঁপা
টকিতে গওহরজান একটি রুমাল ছিল বলে
কিছু চেপে রাখা
মুছে ফেলার দাগও কিছুটা....
৬.
হাস্কি গমের বুকে কট্টর উল নাহয় বিকেলফেরত আস্কারা
দাগ ছিল
দাগে শেরিশেরি ধুকপুক
“এই শোনো” বলার পরেই জানলায় পড়ে রোদবিহান আলো
রিয়া
জীপ টায়ার পরছে, কবেকার বটুয়া যাচ্ছে পানের রন্ধ্রে নাকি কিছু পরছ বলে
শব্দটা
শব্দরা
গমের রং তো কবে থেকেই নিবাসী রিয়ার শীতে শীতে বাহারী উলেন
৭.
সেই জল
কাপের ভেতরে
কফি বনাবার শব্দে
আর চাঁদও অত আঁকা মনে হচ্ছে না যে পাল তুলে দেবে নৌকো
জলে
কে যেন সরল বাসের জানলা মেশায়
সে নামে
সে যায় জাফরিয়ানা ভেঙে ভেঙে
জল
কফির স্পিন
আজ কোন শব্দেই গ্রীষ্ম হবে না দেখে বৃষ্টিও দু চার ফোঁটা
সে তখন
রেনকোটের পুরোটা যখন গোধুলিরিঝিমে সিপিয়া
৮.
আমাদের গ্যাং, আমাদের উদাসীন মল্ট
আমি অবাকবিদ্ধ জেনে তুমি অপাপ
তুমি ঠিক না আমি, আমাদের গ্যাং
শোনো বাওয়াল খয়েরি হচ্ছে, শোনোনা
আমরা কোয়েলে পা রাখি, সঙ্গমটা দূরে হোক
যাদের পেট আছে তাদেরও ঠাসা আছে ইলেকট্রন
নাভির কথা থাক, উদাসীন মল্ট তাই শুয়ে আছে
খেত ছেড়ে উঠছে না
আমি বিদ্যুৎ, তুমিও। চমকাই। মেশিনগুলো গরম না হলে
দাঙ্গা হতে কতক্ষণ
আমাদের গ্যাং এই সবকিছুর মানে বলে দিল, রুটি
গোল গরম, বলে দিল খাও। বেঁচে থাকার মানে, খাও।
উদাসীন আমরা সেইথেকে..
৯.
প্রস্তাব নেই। কুহক আছে, পাঠ করার আগে মনে হল
দরজাটা বন্ধ, খোলেনি। প্রস্তাব আর কুহকের ভেতরে খয়েরি রঙের দরজাটা
এমন নয় যে আপেলের রঙ সেপ্টেম্বর, যা কিছু হতে পারে, কুহক পেরিয়ে যাওয়াই যখন দরজা
খুলে দাঁড়াবে
আপেল প্রস্তাব পড়বে
কুয়াশাকুহকান্ত
সে এক দুরন্ত আপেল, সে এক আর্দ্র উদাসী, কানের পাতা দুটো রেখে যে চলে গিয়েছিল এটা
সেটায়..
১০.
এই যে
যে এই
লিখে মনে হল, একটা রাস্তাই লিখলাম, একটা লোক, পাশে আরেকটা
পা আছে, রাস্তাও তাই নিপীড়িত
সয়ে যাচ্ছে, মা হয়ে
বাবাদের
রাস্তা বৃষ্টি হলেই যে এইসব ভেজা শরীরের সোঁদা ক্রাশ পাঠায়
গাছের নিচে ফোঁটা ফোঁটা এই যে
হুকখোলা
শ্রাবণজলঘোলা
একটা বারান্দায় ঠেকে যায়, কাঠের রেলিং, খাঁচায় ময়না, বাইরে হঠাতই রাস্তা শেষ,
আঙুলই এমন, ময়না খাচ্ছে
যার হাত থেকে
উৎস উৎস ভাব এই যে এখানেই তো, বিস্ফোরণের আগে
হারমোনিকার দিনগুলো
১১.
তার শার্টের বাইরে চিরকাল। বোতামে ধরা মুহূর্তের সা, খুললে ধাক্কার আগে যে গাড়িটা
রোমশ অন্ধকারে রে রে, তার পার্টস চিকণ হয়ে ওঠে। গাড়ির বনেটে বসে কবেকার মধুবালা।
গায়ে হিল্লোল। মাৎ করা
পা
স্বপ্নসমগ্রে
মোজা পরেই
পড়ল
একটা ছাতা চাই, শুধু শুধু ঘুরবে। ধা ধা ধাঁধাঁ। হাসলেই হয় যে প্রকার রেলিংবুলিং,
জল পড়ছে তার লোহায় ঝাঁক ঝাঁক, যাকে বৃষ্টি বলে, সেই। ছাতা খুলল মধুবালা, কী সুষমা!
নিজেই জানতো না সে, চিরকাল কিছু নয়
শার্টে বোতাম বসানো
ছিঁড়ে গেলে সেলাই করা, এই আর কি...
১২.
মাপে মাপে পাখি। চড়ুই থেকে শুরু, বেঁকে গেছে শালিখের দিকে। পোস্ট-অফিস খোলা, আজও।
আশ্চর্য লাঠিচার্জের সময় আমি মনে করার চেষ্টা করছিলাম রোবসপিয়র এই নামটা। রোব রোবে
রবীন্দ্রনাথও, কিন্তু পুলিশের আড়ালে থাকা আমি, রোবসপিয়রকে হাতড়াচ্ছিলাম।
যা হয়, লাঠিচার্জ শেষ। পাখিরা সমাজে ফিরছে। গিলোটিনে নয়, মাতাল বর নেই পাখিদের।
মানুষের পাপ চার্চ হয়ে , মন্দির, মসজিদ হয়ে পাখি হয়। পাপের কত রঙ, কত যে ডাক। সেই
মাপে মাপে আমি ঢালি, তুমি নাও। বিপ্লব হয় ফরাসী, ফ্রান্স জিতে যায়। রোবসপীয়র, মনে
পড়ল যখন কিছু আর করার নেই। পুলিশরা ফিরে গেছে। সন্ধ্যা হল।
রবীন্দ্রনাথ অনেক ফুলের নাম দিয়েছিলেন। যেমন চন্দ্রমল্লিকা। রোবসপীয়র? আমি বই তুলে
রাখি, অপেক্ষা করি ফুল ফোটার। চড়ুই থেকে শুরু হয়ে যে রাস্তাটা বেঁকে গেছে শালিখের
দিকে, সেখানে....
উমাপদ কর
এবার আমি একটা ওপেন ফোরাম করবো। আমি, চিত্ত, দেবাঞ্জন আর পার্থ বাদে বাকি
সকলকে নিয়ে। আমি চাই বাকি সবাই এই কবিতাগুলো নিয়ে কয়েকটা কথা বলুক। রাজেশ শুরু কর।
রাজেশ চট্টোপাধ্যায়
স্বপনদার লেখা শুনলেই মনে হয়, পরিনত একজন লেখকের লেখা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে ডাল ন্যারেটিভ
কিন্তু তার পরক্ষণে আবার জায়গাটা এমন ভাবে দোলা দিয়ে গেল যে সেটা আর মনে হচ্ছে না।
কিছু ক্ষেত্রে আমি পৌঁছাতেই পারিনি, দেখে
পড়তে হবে। তো ওই যে কারুকার্যটা যেভাবে আমার কাছে মনে হওয়া ডাল ন্যারেটিভটা হঠাৎ
করে অসাধারণ হয়ে উঠছে, এই জায়গাটায় কবির পরিনত
মানসিকতা বা বহুদিনের অভিজ্ঞতার একটা ফসল। তো আমরা যে ধরনের কবিতা লেখালেখি করি বা
যে ধরনের কবিতা আমি ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ করি তো আপাত অর্থে স্বপনদার লেখা পড়ে বা
শুনে প্রথমে ভালো লাগবে না, না লাগারই কথা কিন্তু কিছু কিছু জায়গা আছে স্বপনদার লেখার মধ্যে যে
জায়গাগুলো ছুঁয়ে যাচ্ছিল এবং তখন আমার নিজের মনে হচ্ছিল যে, যে জায়গাগুলো আমার ভালো লাগলো
না সেগুলোতে হয় আমি পৌঁছাতে পারছিনা নাহলে আমার অক্ষমতা সে জায়গাগুলোকে ধরার, এটুকুই।
উমাপদ কর
জয়দীপ বল।
জয়দীপ মৈত্র
আমি স্বপনদার একশোটা
কবিতা......এক দুই তিন এর প্রতি ইন্টারেস্টেড ছিলাম.....যেখান থেকে শুরু করেছিল
সেটা আমাকে উৎসাহিত করেছিল ....যখন শুরু করলো একদম বাইশ বলে তখনই আমার এটা মাথায়
এলো। কিছু কিছু জায়গায় আমি..... যে জায়গা গুলো পড়ে হয়তো আমি ছেড়ে দেবো বই লেখাটা
তারপরেই স্বপন দা যে বাঁকটা নিয়েছে সেটা আমার কবিতা ভাবনার সঙ্গে যায় না সেই
জন্যই আমার আরো ভালো লাগলো। এরপরে বোধহয় আজকে...... বলছিলেন একটা কথা একটা
অসাধারণ জিনিস দিয়েছে তারপর এই লাইনটা কেন
তারপরে মনে হল এই লাইনটা পরের লাইন গুলো কি সূচিত করার জন্য দরকার ছিল। আমার
প্রত্যেকটা কবিতাই মনে হল এবং আমার খুবই ভালো লেগেছে কবিতাগুলো। আমি শুনতে শুনতে
কিছু কিছু জায়গা স্পেশালি জল মিশ্রিত ন্যায় ওখানটা পড়ে আমার মনে হল হয়ে গেল আমার
হয়ে গেল ......তারপর স্বপন দা যে বাঁক টা নিয়েছে সেটা অবশ্যই আমার কাছে একটা
অভাবনীয় জিনিস এবং খুব সচেতনভাবে যেটা বাহবা করার জায়গা সেখানে আমার মনে হয়েছে
ইচ্ছাকৃতভাবে সেই জায়গাটা .... …...করে
দিয়েছে কোন জায়গায় । একটা স্পাইরাল আকার ক্রিয়েট করেছে।......... তারপরে
সূর্যের..... তারপরের বাদামি রং টা আমি ফট করে..... আলোচনাটা ভাবছিলাম যে এই যে
আমরা এক একটা লাইনে নেই তার পরের লাইনটা...... যেটা বলছিলেন মাইলখানেক দূরত্ব হতে
পারে দুটো লাইনের কিন্তু কোথায় গিয়েছে...... করছে সেটা আমার মানসিকতা, স্বপনদার লিখন দক্ষতা যাইহোক
আমার ক্ষেত্রে খুব ভালোভাবেই লেখক-পাঠক যে ব্রিজটা, আমার
খুব ভালো লেগেছে।
তন্ময় কুমার মণ্ডল
......... নামটার
মধ্যে একটা.....
ওই তিনটে লেখাই আমার কি হয় শিকার করে আমাকে খুব ভালো লাগে মানে এগুলো নিয়ে পড়ে থাকি পরের গুলো আর মনে থাকে না। তারপর ওই অাবেসটা যখন চলে যায় তখন আমি আবার শুনতে শুরু করি তার মাঝের গুলো আমার আর কিচ্ছু কানে ঢোকে না সেখানে পড়ে থাকি আমি, উদাসীন...... তো অনেকক্ষণ পড়েছিলাম। ওখানে আমি অনেকক্ষণ পড়েছিলাম তারপরে মাঝের গুলো ঢুকেছে বেরিয়ে গেছে। উদাসীন...... লাফ গুলো অসাধারণ লেগেছে সবথেকে আশ্চর্য যেটা ছিল সেটা হল মনে হচ্ছিল এবার শেষ হয়ে যাবে আমার কাছে এটা শেষ যেমন ও বলছিল... । ....... আমার কাছে স্বপনদার বই অনেকগুলো আছে। কিন্তু আমি দু একটা কবিতা পড়ার পর আর পড়তে পারিনি স্বপনদার লেখা। কোথাও গিয়ে মনে হচ্ছে আর পাচ্ছিনা আমি নিতে , আমারই কোথাও ভেতরে অস্বস্তি হচ্ছে। কারণ হলো পরে আমি কারণগুলো দেখেছিলাম কেন আমার...
Post a Comment