Recent Blog Posts

কবিতা নিয়ে দু-দিনের ক্যাম্প। প্রচুর ইন্টার‍্যাকশন, গ্রুপ ডিসকাশন, কবিতা পড়া, তার আলোচনা, কবিতাকেন্দ্রিক গদ্য এবং আরও অনেক অনেক কিছু। আর তারই নির্যাস নিয়ে এই রোয়াক সংখ্যা।


রোয়াকে
কবিতা পড়লেন তন্ময় হালদার 
আলোচনা করলেন শঙ্খদীপ কর

সূত্র ধরলেন উমাপদ কর

এবার আমি তন্ময় হালদার কে কবিতা পড়তে বলবো। তন্ময় আমার দেখাতে একটু অন্যরকম লেখে। একটু মাটির গন্ধওয়ালা। আগে ও পড়ুক তারপরে ওর কবিতা নিয়ে কাউকে আলোচনা করতে বলবো।  শুরু কর  তন্ময়।

 

তন্ময় হালদার এর কবিতা

১.

খুঁজে না পেলে সবার প্রথমে কোথায় খুঁজতে যায় সবাই?

প্রত্যেকেরই একটি চোখ বাঁধা নিজস্ব জায়গা থাকে যেখানে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।আর পাওয়া না গেলেও ওখানেই খুঁজতে থাকে যেন ওখান দিয়েই খুঁজে পাওয়া যেতে পারে অভিনব সুর। আর এভাবেই কি একটা খুঁজতে গিয়ে না খুঁজে পাওয়া বহু আগের হারিয়ে যাওয়া খুঁজে পেয়ে যায়। গ্রাস করে ফেলে সর্বশূন্যতা।

এই খুঁজে পাওয়া দিয়ে কতদূর যাওয়া যায়?

আর না খুঁজে পাওয়া দিয়ে?

 

২.

ফুটফুটে সব আত্মীয়-স্বজন নিয়ে হালকা রঙের আকাশে বেঁচে আছি। দূর থেকে আমাকেই কেন্দ্র মনে করে আর মনে করে উপবৃত্তাকার। একটি কোঁচকানো কাগজ পড়ে আছে। ওখানে কোন ভাবনা লেখা নেই, অতিক্রান্ত নেই, বসবাসটুকুই সদয় হয়ে আছে।সমকালীন জীবন এই যাতায়াত ভেঙে কোনো জঙ্গলে বিপথগামী হয় না। আমি ঘুরে এলাম নিজেকেই। নিজের ভেতর মানচিত্র বৃহৎ হচ্ছে, আর পর্যটন বেড়ে যাচ্ছে।

 

৩.

সারি সারি গাছের পাশ দিয়ে ভিতরে পৌঁছে গেছে রাস্তাটা। আর কৌতূহলবশত গিলে ফেলতে থাকে নিজেকেই। নিজের চেয়েও আমরা আকাশ-কুসুম করতে ভালোবাসি যখন ঘুম আসে না। নেহাত উৎসাহ পাইনি বলে লোনের জন্য দৌড়াদৌড়ি করি, সময়ের কাছে সুযোগ-সুবিধা চাই। অথচ কয়েকগুণ ভাড়া বেশি দিয়ে প্রদক্ষিণে বাড়ি ভাড়া করে থাকি। এ সুবাদে আমার কাছে একটি দ্বিধা এসেছে, সে এখন গভীর, নিভৃতিতে নিসর্গের সাথে পরিচয় ঘটেনি।

 

৪.

অনেকদূর হাঁটতে হাঁটতে

পায়ের শব্দ কখন যেন কমে আসে

 

তখন তাকে সমস্বরে ক্লান্তি বলে ডাকি

 

সুলক্ষণ এই পথ ধরে সূর্য অস্ত যায়

 

আমি জানি আমার ঢালু গ্রামের দিকে

অধিকাংশ জীবন আর আমার মতো নেই

 

৫.

এই গন্ধ অনেকটা ফুল বা তার চেয়েও বেশি, এই যাতায়াত চোখ বুজে ডুবিয়ে দিতে পারে।  আর তাতে আমার চোখ হওয়া হবে না,  কানকো  বর্জিত হলেও ক্ষতি বুঝে ওঠার নয়।  দিন কে দিন  অদৃশ্যের শক্তি লোপ পাচ্ছে।  যে আমি ভাতের গন্ধ  ভালোবাসি,  ভোরের ধর্ম, এক একটি রাস্তা,ফড়িং-এর জালিকাকার ডানা আজ মানুষের গন্ধ পাচ্ছি না।  আশ্চর্য হয়ে কেউ কেউ আমাকে ধার চায়।  আমার মাধুর্য আমি কাকে দেবো সংকীর্ণতা !

 

৬.

আচ্ছন্নতাই ঝিমিয়ে দিয়েছে। দূরে যাওয়া হয় না। হাতের ইচ্ছাপত্র হালকা হলে দুলতে থাকে। দুলতে দুলতে ইশারা হয়। ইশারা অনেক অনেক দূরে স্থানান্তর হয়ে ততক্ষনে মিশে যেতে পারে। কিন্তু কোনো কোনো দূরই শুধু ইশারায় পৌঁছাতে পারে। যদিও দূর ভাঙতেও অনেক ইশারা লাগে।মোনোলগ লাগে। বড়ো বেশি বিবাদ নিঃশব্দ করে দেয়। নিঃশব্দের ভিতর জাদু খেলা আছে,আশ্রয় আছে।

 

উমাপদ কর

শঙ্খদীপ বল, আজকে যে কবিতাগুলো শুনলি সেগুলো নিয়ে বল।

 

শঙ্খদীপ কর

ওর কবিতা নিয়ে বলতে গেলে একটু আগের কথা এসেই যাবে। এখানে যতজনের সঙ্গে আমার আলাপ তাদের  সব আগে থেকে ও আমার বন্ধু। ওর নাম হচ্ছে তন্ময় হালদার। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে যে, একটা সময় পযর্ন্ত আমি নিজেও জানতাম না ও লেখে। ও এতটাই অন্তর্মুখী যে ও লেখে আর সেই লেখা গুলো ও ভেতরেই রেখে দেয়। কেউ জানতো না, মানে ও ছাড়া কেউ জানত না যে ও লেখে, আমিও জানতাম না। যাই হোক অনেক পরে সেটা জানা যায়। আমাদের, এই যে আমরা ক-জন আছি না, তারমধ্যে তন্ময়ের লেখা ভাষার দিক থেকে, কথা বলার ধরণ থেকে সবথেকে আলাদা। এমনকি ও এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করে সেই শব্দ গুলো  কবিতায় সাধারণ ভাবে আমাদের কল্পনারও বাইরে। আমি বলছিলাম আজ চিত্তদা কে, ওর যে লাইনটা সবচেয়ে বেশিবার সবচেয়ে বেশি সময় ধরে কথা বলেছি সেটা হচ্ছে ওর কবিতার একটা লাইন। কবিতার বইয়ের নাম 'ভিতর ঘর'। সেই কবিতার লাইন হচ্ছে " এটা আমার ঘর,  আমি  আর একটু ভিতরে থাকি।"এই লাইনটা নিয়ে যে আমরা কত আন্দোলিত হয়েছি,কত চর্চা করেছি, কতবার কথা বলেছি শেষ করা যাবেনা।মানে আমরা অসংখ্যবার ওর অনুপস্থিতিতে তে অসংখ্যবার এই লাইনগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। এমনকিছু শব্দ ও ব্যবহার করে, যেমন এই কবিতাটা বলছি "ফুটফুটে সব আত্মীয়স্বজন নিয়ে হালকা রঙের আকাশে ভেসে আছে।" আর এরপরে যদি আর কিছু নাও বলা হয়, এই লাইনটা নিয়ে আমরা একটা রাত্রি ঘুমোতে যেতে পারি, শুধু এই একটা লাইন নিয়ে। মানে ওর লেখার মধ্যে একটা অদ্ভুত, অদ্ভুত একটা টান আছে। টান শব্দ টা সম্ভবত পারফেক্ট এ ক্ষেত্রে।  যে টান টা ভিতরটা কে একদম ফাঁকা করে দেয়। আমরা অনেকর লেখায় সারপ্রাইজড হই,  অবাক হই, বিস্মিত হই, আশ্চর্য হই যে, এটা কীভাবে ও লিখলো এই ভেবে।তো তন্ময়ের লেখা পড়বার পর সেই বিস্ময় এর জায়গাটার থেকে বেশি করে থাকবে ওটা শুনে নিলাম তো সেই বিস্ময়ের পর একটা শূন্যতার সৃষ্টি হয় । এইযে " এটা আমার ঘর, আমি আর একটু ভিতরে থাকি" নিজের মধ্যে একটা অদ্ভুত শূন্যতা তৈরি করে। মানে এটা আমারও একটা অক্ষমতা। সজল যেটা বলছিল আগের দিন সেরকম আমিও বলতে পারবো, কেন ভালো লাগে সেটা টেকনিকালি অ্যানালিসিস করতে পারবোনা, কিন্তু ভালোলাগার জায়গাগুলো আমি চিহ্নিত করতে পারবো যেমন "ফুটফুটে সব আত্মীয়স্বজন নিয়ে হালকা রঙের আকাশে ভেসে আছি।" কার কাছে কীভাবে যাচ্ছে জানিনা তবে এই লাইনটা আমার কাছে কিন্তু  এটা একটা অদ্ভুত শূন্যতা নিয়ে আসছে। আমি যখন আমার অভিজ্ঞতা নিরিখে , আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এই লাইনটাকে দেখি। আর একটা লাইন পড়ছি " ওখানে কোনো ভাবনা লেখা নেই, অতিক্রান্ত নেই, বসবাস টুকুই সদর হয়ে আছে, সমকালীন জীবন এই যাতায়াত ভেঙে কোনো জঙ্গলে বিপদগামী হয়না।" অদ্ভুত শব্দের ব্যবহার, মানে সেনটেনস গুলো অদ্ভুত। তিন এক্কে এমন গিঁট খুলতে গেলেই লন্ডভন্ড ...................  আমি জানিনা এটা ব্যকরণগত ভাবে কতটা পারফেক্ট বা আদৌও কতটা ঠিক বা বেঠিক জানিনা কিন্তু চলতি কথা বলার ধরনে বা চলতি লেখার ধরনে এটা যায় না । এই ধরনের সেনটেনস আমরা সচরাচর বলতে বা লিখতে অভ্যস্ত নই এমনকি কবিতাতেও  যখন একটা সেনটেনস লেখা হয় তখন তার একটা পূর্বাপর থাকে মানে লাইনটা শুনতে  ভালো লাগে মানে বুঝতে পারি যে এটা গ্রামাটিকলি ঠিক। হ্যঁ তার কি কনসেপ্ট,  এমন অনেক জায়গা পাওয়া যাবে শুনে প্রথমবার খটকা লাগবে মানে এই ধরনের একটা অদ্ভুত,  একটা অদ্ভুত ও আবহ নির্মাণ করতে পারে।



Post a Comment from facebook

Post a Comment from Blogger