Recent Blog Posts

কবিতা নিয়ে দু-দিনের ক্যাম্প। প্রচুর ইন্টার‍্যাকশন, গ্রুপ ডিসকাশন, কবিতা পড়া, তার আলোচনা, কবিতাকেন্দ্রিক গদ্য এবং আরও অনেক অনেক কিছু। আর তারই নির্যাস নিয়ে এই রোয়াক সংখ্যা।


রোয়াকে
কবিতা পড়লেন রাজেশ চট্টোপাধ্যায়
আলোচনা করলেন সমীরণ ঘোষ, চিত্তরঞ্জন হীরা

সূত্র ধরলেন উমাপদ কর

রেহেল আয়োজিত দুদিনের এই কবিতা ক্যাম্পে আমরা সবাই উপস্থিত হয়েছি। এই দুদিনে মোট পাঁচটা সেশানে আমরা কবিতা নিয়ে বিভিন্ন ধরণের চর্চা করবো।  আজ প্রথম সেশনটা শুরু হচ্ছে কবিতা পাঠের মধ্যে দিয়ে। আজ কয়েকজন কবিতা পাঠ করবেন এবং প্রত্যেকে কবিতা পাঠ করবার পর যারা শুনলেন তাঁদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ সেই কবিতা নিয়ে আলোচনা করবেন। 


কবিতা পাঠের এই সেশানটা আমি শুরু করতে চাইছি তরুণ কবি রাজেশ চট্টোপাধ্যায় কে দিয়ে। বেশ কিছুদিন ধরে রাজেশ কবিতা লিখছে, লেখালেখির চেষ্টা করছে। কবিতা পড়া হয়ে যায় তারপরে আমি আরো দু-একটা কথা বলবো এবং কে কে আলোচনা করবেন সেটাও উল্লেখ করবো। এবার কবিতা পড়বে রাজেশ চট্টোপাধ্যায়।

 

রাজেশ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা

১.

আলোর রক্ত আমার বুকে

ক্ষত সেলাই করার জন্য সূচ হাতে দাঁড়িয়েছ

আশা দিয়ে সেলাই করা হল বিক্ষত বুক

যখন পারবে না ভাবছ

পারা আর না-পারা দুটোই সমান ভাবে অস্তিত্বহীন

 

সমানের মাঝে তির্যক এঁকে

না বলতে চাইছ খুব

আর গোপন হয়ে প্রবেশ ঘুমপথে

আঁতুড় জেগে যাচ্ছে

চুড়ি ভেঙে ফেলার শব্দে

 

২.

তারপর শূন্যতা এলে

প্রত্যাখ্যান

যা কিছু অস্তিত্বহীন তাদের বীজ নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন

চিহ্ন বদলে দিলে

অস্তিত্বের কল্পনায় অস্তিত্বহীনতার বীজ

যা কিছু ভাবি দুই মেরুতে থাকে

 মাঝখান টা শূন্য!!

ওই শূন্য জায়গায় যাদের বাস

তারা মুছে দিয়েছে ভগ্নাংশের হর

 

৩.

যে পুতুল খেলেনি কোনও দিন

তার আঁচলেই প্রকৃত সংসার লেগে থাকে

প্রাকৃতের পাশে বসে উৎসের হিসাব

পুরোনো অঙ্কে ক্রশ

পাঁপড়ি খসে যাচ্ছে ফুলের অভিমানে

তখনই লিখে মুছতে হয়

যখন না-বলা যা কিছু বলা হতে চায়

বাসন মাজার সময় কাচের থালা ভেঙে

স্বপ্ন দেখতে ভয়

মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে

জীবন বানান ভুল করে বসছ বারবার

 

৪.

কাচ খুলে এস, আদিম উত্তর

খামের প্রশ্নে চিঠি নিশ্চুপ বাঁধ।

ভাঙন স্থগিত রেখে পাঁপড়ি-বার্তা

নির্জনে রাখালের বাঁশি ভেঙে পড়ে আছে

 

অন্ধকারের ধারে ভুলে যাওয়া

ভুল সমর্পিত গোয়ালার বাসভূমি জুড়ে

প্রচেষ্টা। আঁঠা ও নখ চাইছে

কুচি কাচ দিয়ে আয়না বানাতে

 

৫.

পথ খুইয়ে সুষুম্না

শপথ ভেঙে পাপ আসক্ত দেহ

কমতি,  নিরাময় নিষেধ অঙ্কুরে

 

মাঝি অসহায় ভাবছে নিজেকে মাঝ সমুদ্রে

শুকনো কপাল ভাতের জন্য কুঁচকে

জল যেদিন নিথর, ভাত অনায়াস

হারিয়ে যাওয়া যা কিছু

ফের আগুয়ান বন্ধ চৌকাঠে

 

পাপের ক্ষয় নাই

দেহের অলস হাসি থমকে

অধরা বিকেল মন কেমন নিয়ে বিমুখ

 

৬.

ভেসে চলেছি, সবাই বলছে নৌকো নৌকো

আমিত্ব খিলখিলে ব্যস্ত, সবাই বলছে মাঝি মাঝি

নাবিক তখনও এগিয়ে চলেছে

দুঃসময় হাতে সুদৃশ্য ঘড়ির সন্নিকটে

 

ভাসা তো ভাষার আলগা ভাব

সরতে সরতে পাশে কেটে গেছে প্রান্ত

ভাবছে সবাই, সবাই ভাবছে

 

বিস্মৃতির আলোয় খোঁজাখুঁজি

স্বপ্নকে বায়ূর রঙ দিয়ে পাঠানো হচ্ছে

মরুপ্রদেশের সিক্ত ঘামে,

হয়তো কোনও উটের কুঁজ

বাঁধ ভেঙে খুঁজবে সেই আমি

যাকে সবাই নৌকো বলছে

 

৭. মহাভারত - ১

দিনের দৈন্য আপেক্ষিক নয়

একটা সরু সুতো থাকা বা না-থাকা

সময়ের দিকে আঙুল তুলতে পারে না

সুখকে টুকরো শান্তি দেওয়া হল

আর শান্তিকে সুখ

গুলিয়ে যাওয়ার আগে চশমা পরে নিতে হবে।

বাবার চোখের জল

ছেলেকে ভাতের থালা থেকে বিমুখ করে

দেখ, দেখ, গঙ্গার ঔরস

এ বিশ্বের চশমা খুলে নিচ্ছে

 

৮. মহাভারত - ২

ন্যায় এক কমন্ডলুর জল

উলটে দিলেও যার রিক্ততা নেই

ধর্মকে ভয় করে তুলেছি তাই

বায়ুস্রোত অন্ধ হয়ে যায় চোখের সামনেই।

দন্ড হাতে এগিয়ে এসেও

ক্ষমা হয়ে যায় যার চোখ

তার চশমা ভেঙে বেরিয়ে এল তারা,

মদিরার স্বপ্নভভঙ্গে

কিছু নাবালিকা বিধবা হয়ে গেল মাত্র

 ###

 

উমাপদ কর

রাজেশ খুব বেশিদিন কবিতা লিখছেনা।কিন্তু তাও প্রায় আমার জানা অবস্থায়  সাত বছর এবং কয়েকটা পত্রিকা ও করত  সম্পাদনা। খুব সম্ভবত 'নবপল্লব' নাম। পাঁচগ্রাম এ থাকে ওখানেই চাকরি করে, প্রাইমারি স্কুলের টিচার। লেখালেখির ক্ষেত্রে  ওর প্রাথমিক দিকের কবিতার সঙ্গে গত দু-তিন বছরের কবিতার বেশ পার্থক্য অন্ততপক্ষে আমাদের নজরে এসেছে। ও লিখুক আরো সুন্দর করে লিখুক। রাজেশ রেহেলের সঙ্গে যুক্ত। রাজেশ আমাদের এখানে যখন এরা বারীন ঘোষালের স্মরণসভা করে তখনও রাজেশ যুক্ত ছিল। কবিতা কে ভালবাসে বলেই এতসব এত দূরত্ব থেকে এসে রাজেশ করে, এমনকি আমার বাড়িতে বহু সিটিংয়ে ও থাকে বা ওদের  নিজেদের আলোচনাগুলোতেও থাকে। তরুণদের মধ্যে এটা দেখলে আমরা যারা, অনেকদিন ধরেই এই মানে ঘষেটি বেগম ঘষে ঘষে চলেছে,  তাদের আনন্দ হয়, ভালো লাগে। এইটুকুই রাজেশ এর সম্পর্কে। সমীরণের, খুব ভালো নয় এমন একটা বার্তা এসেছে, হয়তো বা ওকে চলে যেতে হবে যাওয়ার আগে আমি সমীরণ কে বলছি, রাজেশের কবিতা সম্পর্কে কয়েকটা কথা বলুক।

 

সমীরণ ঘোষ

একেবারে শুরুর দিক থেকেই মানে রাজেশের নিজেকে তৈরি করবার অবকাশ থেকেই আমি ওকে দেখছি। রাজেশের লেখায় উত্থান-পতনগুলো আমি দেখেছি। বহুবার ওর লেখায় উত্থান-পতন এসেছে। শুরুর চেষ্টাগুলো সাধারণ ছিল, তারপর মাঝখানে একটা চমৎকার লেখা লিখছিল। চমৎকার সেই লেখাগুলো খুব আলোচিত হত, আমরা বলতাম রাজেশ খুব নিজেকে দ্রুত পাল্টে ফেলছে, অনেক উৎকর্ষ ওর লেখায় আসছে,  নতুন নতুন ব্যাপারগুলো আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম। তারপরে একসময় দেখলাম সেই লেখার উৎকর্ষতার কাছে যেন ও যেতে পারছে না। অর্থাৎ একটা পতন।


পরবর্তীতে আবার কিছু ভালো লেখা লিখলো, তারপরেই হয়তো দেখা গেল যে সেই লেখায় যেন ফিরে আসতে পারছে না। কিন্তু আজকের লেখাগুলোয় মনে হলো যে সেই ফিরে আসার বার্তা ফিরে এসেছে, এটা ভালো লাগছে।


আর একটা বিষয় নিয়ে রাজেশকে একটু ভাবতে অনুরোধ করবো, যে ওর লেখায় যেন ও নিজেকে খুঁজবার চেষ্টা করে। আত্মঅনুসন্ধানের এবং নিজের লেখাটাকে খুঁজে নেওয়ার এই জায়গাটায় মনে হয় রাজেশের একটু সচেতন হওয়া দরকার। রিসেন্টলি ওর যে গুচ্ছ লেখা পড়েছিলাম তার থেকে আজকেরগুলো শুনে মনে হচ্ছে, যেন এবার রাজেশ নিজের লেখার জায়গায় আসার প্রয়াস করছে  বা এভাবেও বলতে পারি, নিজেকে নিয়ে কসরতটা করছে আর কি। এটুকুই।

 

উমাপদ কর

সমীরণ যা বলল তা হচ্ছে একটা ধারাবাহিক অবস্থান থেকে। কিন্তু একদম আজকের শোনা থেকে, মানে, এই যে দশটা কবিতা ও পড়লো (আটটা কবিতা অন্যরকম এবং একটা সিরিজের দুটো কবিতা) আমি চাই, চিত্ত এই আজকের কবিতা নিয়ে, গতকাল কি লিখেছিল সেগুলো না বলে এর ভিত্তিতে আলোচনা করুক এবং তার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করুক। 

 

চিত্তরঞ্জন হীরা

যেটা আমার সুবিধা, তা হল এই যে, এর আগে রাজেশের কি কবিতা পড়েছি না পড়েছি সেগুলো আমার মাথায় ততটা নেই। সম্প্রতি ভিন্নমুখে রাজেশের কবিতা ছাপা হয়েছে। এই সংখ্যার প্রুফ দেখা থেকে পুর সংখ্যাটাই করেছি কিন্তু একেবারেই ব্যাপারটা মাথায় নেই। মনে করে আমি সেই লেখগুলো বলতেও পারব না। যেটা অ্যাট অ্যা গ্লানস আমার মনে হচ্ছিল, যে ওর প্রত্যেকটা কবিতার মধ্যেই কিছু কিছু লাইন যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। এই সম্ভাবনা কেমন? সম্ভাবনা আমি তাকেই বোঝাতে চাই যা অপ্রত্যাশিত। যে এই শব্দের পর এই শব্দের যে সংযোজনা হল সেই সংযোজনা আপাতভাবে আমার ভিতরে কোনও রকম ছবি তৈরির অবকাশই দিল না।


সেই চমৎকার লাইনটার পর আবার দেখা যাচ্ছে যে অনেকটাই সে নেমে এল, একেবারেই নরম, তার মধ্যে আলাদা কোন দোলন নেই, কোন আন্দোলন নেই, কোন আলোড়ন তৈরি হচ্ছে না। এবং প্রত্যেকটা কবিতার মধ্যেই এই জায়গা গুলো আমি লক্ষ্য করেছি।


সম্ভাবনার জায়গা কোনটা? যেমন আমার মনে হয়েছে- "অস্তিত্বের কল্পনায় অস্তিত্বহীনতার বীজ"। এই যে একটা লজিক এবং লজিক্যাল ক্র্যাক, এর ভিতরে গড়ে ওঠা, এটা আমাকে খুব টানে। এটা আমার ভালোলাগার জায়গা। যেমন ভালো লাগেনি একটা কবিতায় যেখানে ও বলছে 'সুতীব্র সন্নিকটে'  এরকম একটা ব্যবহার ও করেছে। আমার মনে হয়েছে এই শব্দ দুটো এই টোটাল কবিতার যে অবয়ব তৈরি হয়েছে তার মধ্যে যায় না। ওর সমার্থক কোনো শব্দ চাইছে বা ওর থেকে সরে গিয়ে অন্য কোনো শব্দের জায়গা ও খুঁজছে। এই এই আমি নজর করছি এই মুহূর্তে।


এই যে 'দুঃসময় হাতে', খুব ভালো, তারপর বলল ‘সুদৃশ্য ঘড়ির সন্নিকটে’, এটা অতটা নয়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি কী লিখব এটা যেমন একজন কবির ভাবার জায়গা, তার চেয়েও বড় বেশি করে ভাবার যে আমি কী লিখবো না। যেটা আমার মাথায় আসছে- চিন্তা থেকে মন, মন থেকে অনুভূতিতে। আসছে অথচ নিজেকে সেখানে শাসন করা জরুরি যে আমি এটা লিখবনা।


আর কিছু কিছু শব্দ, যেগুলো গতিকে ব্যাহত করে। যেমন "বিস্তৃতির আলোয় খোঁজাখুঁজি" আমি যদি নিজে উচ্চারণ করি, লক্ষ্য করবো জিভে একটা আড়ষ্টতা তৈরি হচ্ছে। এর প্রচুর প্রতিশব্দ আছে, বা পাশাপাশি এমন শব্দ আছে যা দিয়ে রেজোনেন্সটা তৈরি করা যায়, যা আমি তৈরি করতে চাইছি। এটা আমার মনে হয়।


আমার ভালোলাগার যে জায়গা তৈরি হয়েছে সবগুলো পড়তে পড়তে তা হল, প্রত্যেকটা কবিতাতেই কিছু পছন্দের লাইন এসেছে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে ওই সিরিজটা যার নামকরণ করেছে 'মহাভারত'।  মহাভারত বলার সঙ্গে সঙ্গে বহুদিন ধরে আমাদের মাথায় যে একটা মিথিক্যাল কনসেপ্ট ঢুকে বসে আছে তা এসে পড়ে। আর নামকরণের পর যখন কবিতা দুটো পড়লো, তখন সেই আবহটা ভেঙ্গে গেল। আমার মনে হয় সবচেয়ে পজিটিভ জায়গা এই দুটো কবিতার নির্মাণের মধ্যে রয়েছে। এখান থেকে জানিনা আমি সিরিজটা কেমন ভাবে এগোবে, কিন্তু এই নির্মাণের জায়গাটা বড় সুন্দর।


দুটো জিনিস এখানে এসে পড়ে, একটা হল নির্মিতি আর একটা কবিতার বোধ। সঙ্গে নিয়ন্ত্রণও একটা বড় জিনিস, যে আমি কতদূর বলবো আর কতদূর বলবো না। প্রচুর কবিতা লেখা হয় আমাদের মনে মনে, পাতায় ওঠে তার সামান্য। মনের মধ্যে প্রতিমুহূর্তে যে কবিতাটা চলতে থাকে, সেখানে চলতে চলতে কাটাছেঁড়া হতে হতে শেষে যখন পাতায় সেটা ওঠে, অনেকে দীর্ঘদিনের অভ্যাসে তখন তা একবারেই পুরোটা তুলে ফেলতে পারে। অনেকে পারেনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে পারিনা। পাতায় তোলার সময় আমাকে বারবার বারবার কাটাছেঁড়া করতে হয় এবং সেখানে বারবার চলে রিজেকশন। একজন কবির সবচেয়ে বড় জায়গা হলো রিজেকশন। নিজেকে কত বেশি রিজেক্ট করতে পারি তা। রিজেক্ট করতে করতে তার ক্রিম বা নির্যাসটা উঠে আসা জরুরি। আর নিজের পাঠও জরুরি। জোরে জোরে পড়ার প্রয়োজন আছে। কবিতা কতটা মসৃণ হয়ে উঠবে তা এই পাঠের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়ে যায়। তখন বোঝা যায় কতটা রিজেকশন এর দিকে আমাকে যেতে হবে। কতটা পথ তৈরি হয়ে আছে, আর কতটা পথ তৈরি করতে হবে। পথ তো অনির্দিষ্ট। এই যাত্রার কোন শেষ নেই। নিজেকে রিজেক্ট করতে করতে করতে এগোতে হবে প্রতি মুহূর্তে। প্রতি মুহূর্তেই রিজেকশন।


ওর মধ্যে সম্ভাবনা আছে এটা আমার মনে হয়েছে। কবিতা লেখার ক্ষেত্রে ছ-সাত বছর খুব সামান্য সময়। অন্তত দশটা বছর পার হলে একটা জায়গায় ও নিজেই উপলব্ধি করবে। কিন্তু কন্টিনিউ লেগে থাকা চাই, ধারাবাহিকতার চর্চা আর নিজেকে রিজেকশন এর মধ্যে দিয়ে। আর প্রচুর শব্দ নির্মানে যেতে হবে, শব্দকে পালটে পালটে একটা জায়গায় আসা। যে শব্দটা সরাসরি এসেছে তা পালটে পালটে আর মসৃণ জায়গায় আসা। আমি মসৃণতায় বিশ্বাস করি। কেওস থাকবে, পাঠককে ভীষণ অস্থির করবে, কিন্তু তা অন্য ভাবে। আমি একটা কথা বলি, অস্থিরতা কবিতার মধ্যে আসবে কিন্তু কবিতাটা যখন লেখা হয়ে যাবে তখন সেই অস্থিরতাটা সরে গিয়ে, শব্দের অভিঘাত পাঠককে বা শ্রোতাকে একধরনের ব্যঞ্জনা দেবে। বাহঃ এমন করে তো ভাবিনি আগে! এ তো নতুন করে ভাবনার রাস্তা করে দিল। এই জায়গাটা আমার ব্যক্তিগত ভাবে ভালোলাগার জায়গা। সেইরকম ছোট ছোট জায়গা প্রত্যেকটা কবিতার মধ্যে আছে।

 

উমাপদ কর

আমার একটা প্রশ্ন আছে তোমার কাছে। তোমার কি মনে হয়নি, রাজেশের কবিতার মধ্যে এবং ভাবনাচিন্তার মধ্যে, নানা ভাবে একটা দার্শনিক দিক, হঠাৎ হঠাৎ করে প্রতিফলিত হয়ে যায় বা গেছে?

 

চিত্তরঞ্জন হীরা

যে কোনো কবির মধ্যেই দর্শন আছে। একটা দেখা আছে। সাধারণত দার্শনিকতা কবিতায় থিওরিটিক্যালি কারেক্ট হতে শুরু করলে মুশকিল। একটা প্রতিষ্ঠিত দর্শন থাকে, আর কবিতার একটা দর্শন থাকে। প্রতিষ্ঠিত দর্শন আর কবিতার দর্শন এর যে একটা মিশ্রন হলে তবেই তা উপাদেয়। এভাবে কবি যে একটা পথ গড়তে চায়, সেই পথের গড়ে তোলার ফ্ল্যাসগুলো ওর মধ্যে আছে। আমি এটুকু অন্তত বলতে পারি। হ্যাঁ সেই ফ্ল্যাসগুলো অবশ্যই আছে।




Post a Comment from facebook

Post a Comment from Blogger