Recent Blog Posts

কবিতা নিয়ে দু-দিনের ক্যাম্প। প্রচুর ইন্টার‍্যাকশন, গ্রুপ ডিসকাশন, কবিতা পড়া, তার আলোচনা, কবিতাকেন্দ্রিক গদ্য এবং আরও অনেক অনেক কিছু। আর তারই নির্যাস নিয়ে এই রোয়াক সংখ্যা।

রোয়াক অবসরে প্রথম গ্রুপ ডিসকাশনের সূত্র ছিল এই ছবিটি।

বাদ দেওয়া সম্ভাবনাগুলো প্যারালাল ইউনিভার্স

চিত্তরঞ্জন হীরা, পার্থসারথী ভৌমিক, সজল দাস এবং রাজেশ চ্যাটার্জী 

 

রাজেশ চ্যাটার্জী - আজকে রেহেলের গ্রুপ ডিসকাশন সেশনে আমরা প্রথম যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব, সেখানে একটি প্রিজমের ছবি রয়েছে, তাতে লেখা রয়েছে  'আপতিত হচ্ছে কবিতা'  এবং একটি ডায়াগ্রামের সাহায্যে  দেখানো হয়েছে, এটা আজ আমাদের আলোচনার বিষয়। আলোচনায় রয়েছি পার্থসারথী ভৌমিক, চিত্তরঞ্জন হীরা, সজল দাস এবং আমি রাজেশ চ্যাটার্জী। তো আমি চাইছি যে আমরা এই চারজন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বেশ কয়েক রকম  অ্যাসপেক্ট পাবো, - যে কবিতাকে আমরা যেভাবে দেখি বা কবিতা নিয়ে যে ধরনের চর্চা করি, তাতে করে এই ডায়াগ্রামটি দেখে, যে চিন্তাভাবনা আসছে, তা পূর্বপরিকল্পিতই হোক বা তাৎক্ষণিক,  কবিতা একটা প্রিজমে আপতিত হচ্ছে ও কীভাবে সেটা হচ্ছে বলে আমরা মনে করি, এবং তার প্রেক্ষিতে আমাদের বক্তব্য, সেই নিয়েই আমরা আলোচনা করব। 

 

পার্থসারথী ভৌমিক- প্রথমে আমি সাবজেক্টটা নিয়ে একটু কথা বলব। সেটা হচ্ছে, ধরা যাক আপতিত হচ্ছে কবিতা। সুতরাং ধরলাম অ্যাবস্ট্রাক্ট এটাই। প্রিজমে যখন আলো এসে পড়ে, সাদা আলো, তার মানে এখানে অন্যান্য রঙগুলো সব মিশে রঙটা তৈরি হয়েছে, সেই সাদা আলো যখন প্রিজমে পড়ে তখন প্রিজমের চরিত্র অনুযায়ী প্রিজম ওটাকে ভেঙে দেয়। তো আমরা সবাই জানি যে ভিবজিওর বা বেনিআসহকলার অর্ডারগুলো যেভাবে থাকে, সেইভাবে ভেঙে যায়। আমি প্রথমে একটু ডিবেট চাইছি, কবিতা ইটসেলফ আ প্রোডাক্ট।  কবিতা যখন হয়ে গেলো, এটাকে বলা যাবে যেহেতু বিষয়টা সাহিত্যের, কবিতা ভেঙে বিভিন্ন রঙ দেখতে পাচ্ছি, সেই আলোচনায় পরে আসছি, আপাতত একটু পেছন দিকে যাচ্ছি, কবিতা হচ্ছে প্রোডাক্ট, আমরা কালকেও যা আলোচনা করেছি, তাতে করে বারবারই এই কথাটা উঠে এসেছে যে চিন্তা, ভাবনা, চেতনা এইগুলো হচ্ছে কবিতার উৎসারের জায়গা। তো, এই ডিবেটটা যদি এরকম হতো, যে আপতিত হচ্ছে চেতনা, বিচ্ছুরিত হচ্ছে বিভিন্ন রঙের কবিতা, আমার মনে হয় সাবজেক্টটা আরও বেশি পিন-পয়েন্ট হতে পারতো। এটা আমি আগেই বলে নিলাম। এর সাথে কেউ সহমত হতে পারেন, কেউ ভিন্নমতও হতে পারেন, ভিন্নমত হলে অবশ্যই আলোচনা করবেন। আরেকটা কথা বলছি, প্রোডাক্ট বলতে, যেকোনো একটা পদ্ধতি বা প্রসেস, আমরা কী করে চিনব একটা প্রসেস? একটা প্রসেসের তিনটে অংশ থাকে, একটা হচ্ছে ইনপুট, প্রসেসটা মাঝে যখন থাকে, তখন তা কিছু কালেক্ট করে, তা নেচার থেকেও হতে পারে, আর আউটপুটে গিয়ে হচ্ছে প্রোডাক্ট। অর্থাৎ ইনপুট পড়লো, প্রসেসটা চলল, আর এদিকে এসে পড়লো প্রোডাক্ট। তো কবিতাকে এজন্যেই প্রোডাক্ট বলা যাবে।  প্রসেস কাকে বলে? প্রসেসকে বলা যায়, যে এটা কম্বিনেশন অফ সিক্স এম, সিক্স এম মিনস, ম্যান, মেশিন, মেটেরিয়াল, মেথড, মেজারমেন্ট ও মাদার নেচার। এটা নিয়ে খুব বেশি অন্যদিকে না গিয়ে কবিতার দিকে ফিরে আসি। কবিতাতেও এ ধরনের জিনিস আমরা দেখতে পাব, কবিতা ভাঙলে দেখতে পাবো, যে কবিতা লিখছে, সে ম্যান। মেশিন হচ্ছে আমাদের ব্রেন। মেটেরিয়াল হচ্ছে তার চিন্তাসূত্র, যে ভাবনা আমাদের মধ্যে কাজ করছে। তারপর মেথড হচ্ছে তার লিখিত করার নির্দিষ্ট উপায়, যিনি লিখবেন তিনি তো একটা নির্দিষ্ট মেথডে কবিতাটা লিখবেন। মেজারমেন্টের জায়গাটা একটু ডিফিকাল্ট, কারণ একটা অত্যন্ত বড় বিতর্ক বা আলোচনার জায়গা খুলে যাবে, যা এই মেজারমেন্টের জায়গা থেকে বাঁক নিতে পারে, সংক্ষেপে বললে, এটা প্রমাণিত যে একটা কোয়ালিটিটিভ প্রোডাক্টের মেজারমেন্ট করা যায়,  কবিতার ক্ষেত্রে হয়তো এটা পুরোপুরি এক হবে না, আর মেজারমেন্টের পর হচ্ছে মাদার নেচার, নেচার বলতে প্রকৃতি। কবিতার যে ইনপুট , তা আমাদের চারপাশের পরিমন্ডল, প্রকৃতি, মানুষজন, পশুপাখি, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জড়বস্তু, সবকিছুর মধ্যে থেকেই আমরা সেই উপাদান খুঁজে নিয়ে থাকি। তো এই জায়গায় আসা গেলো যে কবিতা একটা প্রোডাক্ট। কম্বিনেশন অফ সিক্স এম। তো কবিতা আপতিত হচ্ছে এবং কবিতা ভেঙে গিয়ে বিভিন্ন রঙের বিচ্ছুরণ দেখা যাচ্ছে, তো এখানে, কবিতা যেহেতু ভেঙে যাচ্ছে তো এই রঙের বিচ্ছুরণকে কবিতার একেকটা এলিমেন্ট হিসেবে ধরতে হবে। তো কবিতা আপতিত হচ্ছে এবং আমরা দেখছি যে রামধনুর মতো রঙটা পরপর ভেঙে দেখানো আছে। তো কবিতাকে কিভাবে প্রোডাক্ট ধরব? যেহেতু কবিতাটা ভেঙে যাচ্ছে, এর আগেই বললাম যে যদি কবিতার আউটপুট হতো, তাহলে বিভিন্ন রঙের কবিতায় যেতে পারতাম। এখানে সেই সুযোগটা নেই। এখানে কবিতাটাই ভেঙে যাচ্ছে। এখানে স্পেসিফিক একটা কবিতাকেই উদাহরণ হিসেবে নিতে হবে। এবার একটা কবিতা যদি ভেঙে যায়, তার কী কী রঙ বা এলিমেন্ট হওয়া সম্ভব? একটা কবিতার এলিমেন্ট হিসেবে যদি তার শরীরকে ভাঙি তাহলে অবশ্যই আমরা কিছু শব্দ পাব। শব্দ মানে ওয়ার্ড। শব্দ ভাঙলে, বা কবিতাও যখন আমরা শুনছি বা পাঠ করছি, শ্রাব্যতা যখন গ্রাহ্য হচ্ছে , তখন একটা সাউন্ডও আমরা পাব। এই সাউন্ডটাই কিন্তু ইন্ডিকেট করছে যে ধ্বনি বা কবিতার উৎস সেই জায়গাটা আমাকে চিনিয়ে দিচ্ছে, তো এই সাবজেক্ট যা রাখা হয়েছে, তার সাথে আমরা কবিতাকে যেভাবে দেখছি তার সঙ্গে একটা সাযুজ্য খুঁজে পাচ্ছি। এর পরে কবিতার যে অ্যাসথেটিক্স, সেটা কবিতার একটা রঙ হতে পারে, যে কবিতাটা বলা হলো, প্রথম কথা হচ্ছে সেটা সরাসরিভাবে আমাদের কাছে কীভাবে এসে পৌঁছালো, তার গভীরতা থেকেই আমরা আবার অন্য রঙ পেতে পারি। এর পরে আরও যদি কিছু বিশেষ কবিতাকে আমরা ভেঙে দেখার সুযোগ পাই, তাহলে আমাদের আলোচনাটা একটু বড় হতে পারে। 

 

চিত্তরঞ্জন হীরা- ব্যাপারটা হলো যে, বিষয়টা সম্পর্কে আমি যেহেতু ভাবার কোনো অবকাশ পাইনি, এতক্ষণে ব্যাপারটা কিছুটা আমার কাছে এলো, কবিতাটা ভেঙে গিয়ে রঙের মাধ্যমে বিচ্ছুরণ ঘটছে, আমি এই বিষয়টাকে কিছুটা সরিয়ে রঙকেই অন্যভাবে নিলাম। অর্থাৎ একটা কবিতা আমাকে কী দেয়, অর্থাৎ প্রিজমটা যদি আমি হই, আমি একজন গ্রহীতা বা পাঠক। অর্থাৎ একটা কবিতা আমি পড়লাম। পড়ার পর কী কী পেলাম, এখানে রঙের মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে। একটা কবিতা যদি ভেঙে যাওয়ার পর্যায়ে ধরি, তাহলে একটা কবিতা পড়ার পর আমাকে যে টানে, মানে, আমার মধ্যে যে আলোড়নটা তৈরি হয়, তা কিছু ধ্বনি। ধ্বনির মাধ্যমে কী এসেছে? চারপাশের প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করা কিছু ধারণা। ওই ধারণাগুলো আমার মধ্যে অভ্যাসগতভাবে আছে, গ্রহণের একটা অভ্যাস থাকে, তারপরে আমি এবার বিশ্লেষণে বসলাম, যে একটা কবিতার প্রাথমিকভাবে ভাবনার উৎসে কোথাও না কোথাও একটা বিষয়কেন্দ্র ছিলো। সেই বিষয়টা ওই কবিতায় বলতে বসে সে নানা দিক বিস্তার করল। সেই দিকগুলোকে রঙ বলতে পারি। কিন্তু রঙ আমাকে আবার কী বিশ্বাস দেয়? বিশ্বাস নানা রকম। দুটো জিনিস আমার কাছে প্রধান। কীভাবে আমি এতদিন দেখে এসেছি, আর এর বাইরে আর কী কী দেখা থাকতে পারে। তখন আমার মধ্যে কিন্তু আর কোনও রঙ থাকছে না। রঙ তখন আর অনুভূতি দিচ্ছেনা। দিচ্ছে কতগুলো বোধ। এই বোধ চারপাশের ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে, অর্থাৎ কী হলো, কী হতে পারত, কী হওয়া উচিত ছিলো, এইভাবে একেকটা শব্দ আলাদা আলাদা ভাবে,শব্দের শুধু উৎস নয়, শব্দের নানা রকমের ধারণা, এই ধারণা তখন একেকটা শব্দ থেকে, বা একটা কবিতার পংক্তিতে কতগুলো শব্দ রয়েছে, সেই শব্দ মিলে একটা বাক্য, একটা বাক্য, একটা বিষয় বা বস্তু সম্পর্কে কিছু ধারণা দেয় যা কখনই সামগ্রিক ধারণা নয়। অংশত ধারণা। আমার ভেতরে যখন আসছে, সে সেই অনুভূতিগুলো জুড়তে জুড়তে আমার ভেতরে একটা সমগ্রের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। যে আচ্ছা, এটা এই, বা এই হতে পারতো, আমি এখন এই মুহূর্তে এই এই এইগুলো দেখলাম। সামগ্রিকভাবে যখন এই বিষয়টা, এই পুরো কবিতাটা পড়ার পর যখন আমি এবার আলাদা করে পড়ছি, পড়তে পড়তে একটা ভাবনা তৈরি হলো, পড়া শেষ হয়ে যাওয়ার পর ওর ভেতরে সেই অনুরণনগুলো তখন বোধকে সম্মিলিত করছে। বোধকে সম্মিলিত করে আমার জীবনবোধ, আমার এতদিনের চলার অভ্যাস, সেই অভ্যাস থেকে, কখনো কখনো জীবন থেকে বের করে নিয়ে আসছে। জীবন থেকে বের করে নিয়ে এসে একটা আনন্দের স্ফুর্তি দিচ্ছে। তা একটা রঙ হতে পারে। কখনো বা দুঃখের বা না পাওয়া, না পাওয়ার বেদনা, কখনো না পাওয়ার মধ্যে থেকেও আমার অস্তিত্ব, যে আমি তাহলে আছি, এই সবকিছুর মধ্যে আমার থাকাটা, এই থাকাটার মধ্যে স্বাভাবিক বা সাধারণ জীবন থেকে আমার এক অন্য অবস্থান যা আমাকে নতুনভাবে বাঁচার উদ্দীপনা দিলো, কখনো কখনো এর মধ্যে থেকে যেটা আসতেই পারে, পার্থর যে ব্যাখ্যাটা, খুব সুন্দর, এই মুহূর্তে আমার মনে হলো, ওর পুরো কথাগুলোই যদি একটা কবিতা হতো, তাহলে কী কী হতো, আমি তো দীর্ঘদিন কারখানায় কাজ করে এসেছি, এবং ওর ব্যাখ্যা থেকে পুরো ব্যাপারটাই একটা বিজ্ঞানচেতনার জায়গা থেকে আমার সামনে উঠে এলো। ওর প্রতিটি শব্দের সাথেই আমার কারখানায় কাটানো এতদিনের জীবন, তার সম্পর্ক রয়েছে। এভাবেই আমাকে দেখতে হয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে কবিতাটা আর আমার মধ্যে এই মুহূর্তের জন্য রইলো না। রইলো কী? না আমি যে জীবনটা কাটিয়ে এসেছি, তাতে প্রোডাক্টটাই তো প্রধান ছিলো। সকালে যখন আমি কারখানায় ঢুকলাম, আমাকে টার্গেট দিয়ে দেওয়া হলো। যে এই টার্গেটটা প্রোডাক্টের টার্গেট, যা করে উঠতে পারলে আমার সেদিনের মতো কাজটা শেষ হলো, মানে আমার যে ডিউটি, তা পূর্ণ হলো। এই অবস্থানটা কবিতার মধ্যেও ঘটতে পারে। একটা কবিতা লিখে ওঠার পর এইবার আমি সেই ম্যান, এবার আর পাঠক নই। প্রোডাক্টের জায়গায় চলে এলাম। 

 

রাজেশ চ্যাটার্জী - আচ্ছা আপনি কী মনে করেন যে কবিতাটা প্রোডাক্ট? আপনি পার্থদার সাথে সহমত, নাকি আপনি মনে করেন কবিতা লিখে ফেলার আগে যে ব্যাপারস্যাপারগুলো ঘটলো, সেটা কবিতা? 

 

চিত্তরঞ্জন হীরা- কবিতা একটা প্রোডাক্ট, এটা আমার আগে এই ভাবনাটা কখনোই মনে হয়নি। এই প্রোডাক্ট শব্দটার প্রতি আমার একটা অনীহা ছিলো। যে কবিতা লেখে সে একজন স্রষ্টা। আমি যে মেশিনে কাজ করি, সেটায় একটা মেটেরিয়াল দেওয়া হয়েছে, সেই মেটেরিয়াল থেকে যে প্রোডাক্ট আমি তৈরি করব, তার একটা ডায়াগ্রাম আছে। তার কতগুলো মেজারমেন্ট আছে। তারপর কী আছে? তার কোয়ালিটি। এবং কোয়ালিটি মেজারমেন্টেরও জায়গা আছে। বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে কোয়ালিটি সার্কল আছে। সেটা অ্যাশিওর  করে ডায়াগ্রাম অনুযায়ী। আমি ডায়াগ্রাম অনুযায়ী প্রোডাকশনটা দিলাম। আমার নিজস্ব এবিলিটি অনুযায়ী। কিন্তু সেটা তার প্রমাণ নয়। প্রমাণটা হলো যখন বলবে যে তুমি তোমার এই প্রোডাক্টটা, তোমাকে দেওয়া ডায়াগ্রাম অনুযায়ী এতটা পারসেন্ট অব্দি তুমি অ্যাশিওর করতে পেরেছ।  এবং তার একটা লিমিট আছে। হাই লিমিট-লো লিমিট আছে। সেই লো লিমিটের আন্ডারে যদি থাকে, সে আন্ডার রেক্টিফিকেশনে যাবে যে তোমার এখনও অব্দি এই সুযোগটা দেওয়া হলো, যে তুমি রেক্টিফাই করো, সেই রেক্টিফিকেশনের পর আবার তার কাছে যেতে হচ্ছে, তারপরেও আন্ডার দ্য লোয়ার লিমিট দেখলে এবার সে রিজেক্ট করছে। হাই লিমিট আর লো লিমিটের মাঝে এলেও, আপ টু দ্য মার্ক না হলেও, আমরা সেটা পাস করছি। এটা হলো প্রোডাক্টের ব্যাখ্যা। 

 

রাজেশ চ্যাটার্জী - কিন্তু কবিতার ক্ষেত্রে? প্রোডাক্টটা কে বলবে? 

 

চিত্তরঞ্জন হীরা- কবিতার ক্ষেত্রে, একজ্যাক্টলি, কবিতার ক্ষেত্রে কিন্তু এই স্কোপটা, এই মাপকটা, মেজারমেন্টটা নেই। 

 

রাজেশ চ্যাটার্জী - যদি কবিতাকে প্রোডাক্ট ধরেও নিই, তার কোয়ালিটি মান, বা তার রেক্টিফিকেশন, সেটা কে ঠিক করবে? 

 

চিত্তরঞ্জন হীরা- সেটা ঠিক করার দুজন আছে। যে প্রোডাকশন করছে, সে তা কমপ্লিট করার পর তার যে কোয়ালিটি সার্কেল , সেই সার্কেলটা ব্রেনের, তার চেতনবিন্দুতে, সে তখন রিডার হয়ে গেলো। অর্থাৎ লেখাটা কমপ্লিট করার পর , তার কাছে তার মাপকযন্ত্রগুলো দিয়ে সে প্রথম বিচার করছে, সে যা লিখতে চেয়েছে তা পেরেছে কিনা, অর্থাৎ লো লিমিট আর হাই লিমিটের মাঝে আছে কী? এই লিমিটের মধ্যে, এই আলায়েন্সের মধ্যে কী আমি সেটা ফেলতে পেরেছি?  যদি হয়, তাহলে আমি ছেড়ে দেব। কবিতার ক্ষেত্রে তো এই মাপক এক্সিস্ট করেনা। সে কী করবে? সে সেই প্রোডাক্টটা, যদি ধরি আমি লেখক, লেখার পর আমিই প্রথম পড়ছি, পড়ার পর দেখছি নাহ, নট আপ টু দ্য মার্ক, মানে আমার এখনো রেক্টিফিকেশনের জায়গা আছে, আমাকে আবার বসতে হল। এইবার এই অ্যাশিওর করার জায়গাটা, অর্থাৎ একটা টাইম, মাপক হিসেবে একটা সময়, সেই সময়ে সে ভাবল এটা ঠিক আছে, এবার এটাকে অন্য পাঠকের হাতে ছাড়া যায়, এর বিচারক কে হলো? হলো পাঠক। এবার পাঠক তো একজন নয়,অসংখ্য পাঠক। এবার এই জায়গায় আসি। ধরা যাক আমি একটা কবিতা পড়লাম। পড়ার পর এই দশজন, এই ক্যাম্পের দশজন এই কবিতাটা নিয়ে বিচার করতে বসলো। তখন হলো কোয়ালিটি অ্যাশিওরেন্সের জায়গা, যে আমার এই জায়গাটা ভালো লেগেছে, বা লাগেনি, এইভাবে একটা জায়গায় গিয়ে একটা দাঁড়ালো। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, এটা কি প্রোডাক্ট? তাহলে ব্যাপারটা সংশয়ের জায়গায় থাকবে। কারণ এর নির্দিষ্ট কোনও মাপক নেই। আমি যখনই একটা প্রোডাক্ট বলবো, তখনই এই এই জিনিসগুলো এসে দাঁড়াবে, তাহলে তাকে কোয়ালিটি অ্যাশিওরেন্সের জন্য একটা মাপক দিতে হবে। একটা মাপক দিয়ে নির্দিষ্ট করতে হবে হ্যাঁ, এটা এই বিন্দুতে এসে দাঁড়িয়েছে, এটা কারেক্ট প্রোডাক্ট। এই ক্ষেত্রে আমি কিন্তু কবিতাকে তাহলে প্রোডাক্ট বলবো না। 

 

উমাপদ কর- শ্রোতার পক্ষ থেকে আমি সঞ্চালককে প্রশ্ন করতে চাই, এটা কি গ্রুপ ডিসকাশন? নাকি প্রশ্নোত্তর পর্ব শুনছি? দ্বিতীয় হচ্ছে, একজন শ্রোতা হিসেবে আমি চাইব সবাই এতে অংশগ্রহণ করুক। 

 

সজল দাস - আমার আগে যারা দুজন বললেন, তারা দুজনেই, আমার মনে হয়েছে পাঠকের পারস্পেকটিভ থেকে বললেন। মানে পাঠক যখন কবিতাটা পড়ছে, সে কীভাবে কবিতাটা তার মধ্যে ভাঙছে সেটা শুনলাম। আমি আরেকটা ধারণা নিয়ে বলি। যেখানে আমরা এটাও ভাবি যে কবিতা নির্মিত হয়ে আছে। আমরা তার একটা ফর্ম লেখার মাধ্যমে রাখছি। এটাকে যদি ধরি কবিতার আকরিক তৈরি হয়ে আছে, তাহলে আমি এই যে ছবি, তার থেকে দুভাবে বলব। যে লিখছে, যে নির্মান করছে, সে কবি এবং পাঠক। এবার কবিতা যদি আপতিত হয়, তাহলে যে লিখছে তার মধ্যে কী হচ্ছে? ধরুন পাঁচজন লিখছে।  পাঁচজন ঐ যে কবিতাটা, তার মেধা বা অনুভবের স্তর অনুযায়ী, ওটা কিন্তু তার চিন্তাপদ্ধতির মধ্যে দিয়ে কবিতাটা পাঁচ রকম ভাবে বেরোচ্ছে। আমি যদি এই রঙগুলোকে একেকটা স্বাদ ভাবি, তাহলে ওই মূল যে কবিতাটা, তার পাঁচটা আলাদা স্বাদ আমি পাঁচজনের কাছ থেকে পাচ্ছি। যে লিখছে তার পারস্পেকটিভ থেকে যদি ভাবি। পাঠকের পারস্পেকটিভ থেকে কী হবে? এই যে পাঁচটা স্বাদের কবিতা, তার মধ্যে যখন আপতিত হচ্ছে, তার চিন্তাপদ্ধতির মধ্যে যখন আসছে, প্রিজম যদি একটা চিন্তাপদ্ধতি হয়, বা অনুভবের জায়গা হয়, তার ওই যে একেকটা কবিতা, একেকজন পাঠকের মধ্যে আরও অন্য অন্য স্বাদের অনুভূতি তৈরি করছে, অন্য অন্য স্বাদের কবিতায় পৌঁছোচ্ছে। আমি এটাকে এভাবেই দেখতে চাইবো। যদি কবিতাই আপতিত হয়, ধরে নিয়ে যদি এগোই, তাহলে তার যে বিচ্ছুরণটা, এই বিচ্ছুরণটাকে, আমি এইভাবে দেখতে চাইবো। 

 

রাজেশ চ্যাটার্জী - সজলদা যেটা বলল, সেটা সজলদার একটা ব্যক্তিগত মতামত। আমি যেভাবে এটাকে দেখছি, সেটা হলো প্রিজমটাই, তার জায়গায় যদি নিজেকে রাখি, আমি নিজেকে দুইভাবে রাখব। প্রথমভাবে যেটা রাখব, সেটা হচ্ছে আমি একজন লেখক এবং আমার মধ্যেই কবিতা আপতিত হচ্ছে। তো যেটা আপতিত হচ্ছে, সেই সাদা আলোটা, সেটাকেই আমি যদি কবিতা ধরি, আগের কথাগুলো, অর্থাৎ প্রোডাক্ট রিলেটেড আলোচনাটা বাদ দিলে, যে লেখা হয়নি এখনও, আমার মধ্যেই আপতিত হবে, তারপর আমি লিখবো। তো দেখা গেল যে, আমার মধ্যে যেটা ঘটলো, ভাবনাচিন্তার বিচ্ছুরণই হোক বা পূর্ব অভিজ্ঞতা, বা যা কিছু, সেটা যখন আমার মধ্যে দিয়ে আপতিত হচ্ছে, তারপরে যেটা বিচ্ছুরিত হয়ে বেরোচ্ছে, এখানে সাদা আলো তাই সাতটা। আমি ধরে নিলাম এন সংখ্যক বেরিয়ে এলো। সেই এন সংখ্যকের মধ্যে আমরা কতগুলো ধরতে পারি, বা আমরা, কতগুলো ধরতে পারিনা, তার পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা লিখবো। আমি এখানে লেখক হয়ে যখন লিখবো, তখন সেই কবিতাটা আমি নাও লিখতে পারি। দেখা গেল, একটা সংবেদনশীলতা তৈরি হলো, কিন্তু আমি সেটা লিখতেই পারলাম না। অর্থাৎ সেই “আমিপ্রিজম” এর মাধ্যমে যখন একটা কবিতা আপতিত হচ্ছে, আমার কাছ থেকে কোনো বিচ্ছুরণই এলো না। 

 

সজল দাস - না, প্রিজমে যদি আপতিত হয়, তাহলে তো রঙ ভাঙবেই। কীভাবে ভাঙে? ধরি একটা কম্পোজিট রে, সে যদি ওই প্রিজমের মেটেরিয়ালের গতি অনুযায়ী, একটা নির্দিষ্ট কোণে বিচ্যুত হচ্ছে। যার জন্য ওটা ভাঙছে। যদি প্রিজমে তা আপতিত হয়, যদি তা একবর্ণের কালারও হয়, তখনও সে বেরোবে কোথাও না কোথাও দিয়ে।  

 

শঙ্খদীপ কর- কিন্তু এটা তো ধরা হচ্ছে। ধ্রুবসত্য তো নয়। ইভেন, প্রিজমে আপতিত রঙের সংখ্যা সাত, এটাও এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত সত্য। এটাও আলটিমেট নয়। ফলে প্রিজমে পড়লেই সাতটা বর্ণালী, ওই ফ্রেমটাও তো কনস্ট্যান্ট নয়। কবিতার কোনোকিছুই তো ধ্রুব নয়। ফলে এই যে ফ্রেমটা ধরে আলোচনা শুরু হলো, এটাও তো ভাঙবে। 

 

রাজেশ চ্যাটার্জী - আমি বেরিয়ে গেছি। যেটা সজলদা বলল, সেই বর্ণের পট্টিগুলো, আমার মধ্যে আসতেও পারে, নাও পারে। এলে লিখি। না এলে লিখিনা। আরেকটা কথা, পাঠকপ্রিজম। আমি যখন একটা লেখা পড়ছি, তখন একবার পাঠে আমার একটা বর্ণের পট্টি তৈরি হলো, ধরা যাক, আমার মধ্যে একটা উপলব্ধি তৈরি হলো, পরবর্তী পাঠে, অন্য কালারের তৈরি হলো। অন্য ভাবনা এলো। এবং দুই পাঠের মাঝখানের সময়, সেটা হতে পারে, কয়েক সেকেন্ড, কয়েক মিনিট, বা কয়েক বছর। ফলে সেভাবে যদি আমি প্রিজমটাকে দেখি, তাহলে দুটো কেস আমার কাছে ঘটতে পারে। এক হচ্ছে “আমিপ্রিজম” লেখক এবং “আমিপ্রিজম” পাঠক। এবারে, আগে পাঠকের পারস্পেকটিভ থেকে ভাবা হচ্ছিলো। আমি চিত্ত দা ও পার্থ দাকে অনুরোধ করব, প্রিজমটাকে পাঠকের পারস্পেকটিভ থেকে না ভেবে লেখকের পারস্পেকটিভ থেকে ভাবা হোক। 

 

পার্থসারথী ভৌমিক- হ্যাঁ মানে মূল জায়গাটা একই থাকছে। শুধু পাঠক ও লেখক, দুটো সত্ত্বাকে বদলে নিতে চাইছে এই প্রিজমের বিষয়টা। এখানে সবকিছুই সিম্বলিক। এই প্রিজমটাও। রঙটাও। এবার যেহেতু এটা কবিতা ক্যাম্প, তাই কবিতার জায়গাটাকেই শুধু আমরা ধরে রাখছি। বাকি সবই সিম্বলিক ধরছি। রাজেশ ওই জায়গাটা ভালো ধরেছে, “আমিপ্রিজম” লেখক এবং “আমিপ্রিজম” পাঠক। এবারে, বলতে চাইছে, প্রিজমটা লেখক হলে কী হবে। এবারে ওই জায়গায় ফিরে যাই, যে আপতিত হচ্ছে কবিতা, মানে আমাকে বুঝতে হবে, আমি যদি লেখক হই, তাহলে আমার যেভাবে কবিতাটা মাথার মধ্যে এলো, সেই অ্যারেঞ্জমেন্ট, সেটাই আমার প্রিজম অবস্থা। তখনও আমি কবিতাটা লিখিনি। এবং সেক্ষেত্রে এই ভেঙে যাওয়াটা অনেকটা সত্যি হয়ে যাবে। কারণ আমরা আলোচনা করতে করতে মেনেছি যে আমরা যে কবিতাটা লিখি আর যে কবিতাটা মস্তিষ্কে আসবে, তার একটা ভিন্নতা আছে। দুটো ভিন্ন ধারণা। যেটা জন্ম নেয় সেখান থেকেই সেটা হারিয়ে যায়। কিন্তু তার একটা ধারণা, সেটা আমরা পুরোপুরি কাগজ কলমে ধরতে পারলাম না। সেক্ষেত্রে লেখকের মধ্যে যে চিন্তাভাবনাটা এসেছিলো, সেই চিন্তাভাবনাটা থেকে যেটা আলটিমেটলি শব্দে বা অক্ষরের মধ্যে নির্মিত হলো, সেটা এখানে রঙের বিভাজন হিসেবে অনুমেয়। 

 

স্বপন রায়- আচ্ছা আলোর গতি কেমন? সরলরৈখিক তো? কখন তা বেঁকে যায়? এই  বর্ণালীকে যখন একটা ভারী কিছু, ধরে নিই চেতনার দিকে রাখি, সেই রাখলে কী হয়? এই নিয়ে একটা বিতর্ক আছে, কেউ বলছে ব্ল্যাকহোলের সামনে আলো এলে শুষে নেবে, কেউ বলছে বেঁকে যাবে, মানে যেন সময়ের বক্ররেখা। এখন আবার হকিং বলেছেন, কিছু কণা পাস করে যায়। তাহলে স্পেকট্রামের বা চেতনার কথা বলি, রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, জানিনা হয়তো জেনে বা না জেনে (হাসি), - আমার চেতনার রঙে পান্না হলো সবুজ। ওনাকে বলা হলো ভাববাদী। এবার আমার চেতনা মানে? মস্তিষ্কের চেতনা। আমরা সবাই জানি আলোর খেলা। রঙ যা আমরা দেখি, তা কিন্তু তার রঙ নয়। যদি এই পৃথিবী অ্যান্টি ম্যাটার দিয়ে গড়া হতো, তাহলে কী এরকম দেখতাম? হয়তো এই বোতলগুলো কথা বলতো, আর আমরা হতাম দ্রষ্টব্য। তাহলে প্রিজমের মাধ্যমে বিচ্ছুরিত যে চেতনা, আসলে কবিরা তো ভাবুক, এটার আলটিমেট কোনো গন্তব্য থাকতে পারেনা। অত কিছু ভাবার নেই। পাঠক নিলে নেবে। আর পাঠক ব্ল্যাকহোল হলে শুষে নেবে বা বেঁকে যাবে। পাঠক পন্ডিত ব্যক্তি হলে বেঁকে যাবে (হাসি)।

 

জয়দীপ মৈত্র- আমার সবসময় মনে হয় যে একটা কবিতা যদি ইটসেলফ একটা ইউনিভার্স হয়, যে কবিতাটা আমি লিখলাম সেটা একটা ইউনিভার্স। বাদবাকি যেগুলো লিখলাম না, সেই সমস্ত কবিতার সম্ভাবনাগুলো, যা বাদ দিয়ে ওটাকে বেছে নেওয়া হল, সেই বাদ দেওয়া সম্ভাবনাগুলো প্যারালাল ইউনিভার্স। আমি একটা কবিতা লিখলাম, ওইখানেই শেষ করলাম কেন? শেষ লাইন ওটা নাও হতে পারতো। ওই নাও শেষ করতে পারতামটাও হয়তো কোথাও লিখিত হচ্ছে। এবং এরকম ভাবে শুধু সাতটা নয়, একটা উৎস কবিতা বিশ্লিষ্ট হলে, ইন ফ্যাক্ট অসংখ্য অসংখ্য কবিতার সম্ভাবনা খুলে যেতে পারে।স্বপনদা যেটা বলল আলো তো মুড়েও যেতে পারে।যার সূক্ষ্ম চেতনা নেই তার মধ্যে কবিতা বিচ্ছুরিত হচ্ছে না। আমার মনে হয় আমরা প্রত্যেকে একটা এলিমেন্ট, আমরা একটা রিসিভার, এই যে গাছের পাতা খেলা করছে, আমার মনে হয় এটা এই মুহুর্তে এরকম খেলা করা উচিৎ বলেই করছে। এটা একটা ম্যাথামেটিকাল জিনিস। যেটা লেখা হলো সেটা এই মুহূর্তের পসিবিলিটি। আর যেগুলো লেখা হলো না, সেগুলো অনন্ত পসিবিলিটি। এঞ্জেলো বলেছিলেন, আমি মূর্তি বানাইনি, শুধু পাথরের অপ্রয়োজনীয় অংশগুলো বাদ দিয়েছি, এই বাদ দেওয়াটা একেকটা অংশ। আলাদা আলাদা রঙগুলো তো আলাদা আলাদা পসিবিলিটি।  আমরা সত্যিই যদি উৎস কবিতার পেছনে ছুটতাম তাহলে লেখা বাদ দিয়ে চুপচাপ বসে থাকতাম। যাইহোক, এই যে উৎস কবিতার অক্ষম অনুবাদগুলো, সেগুলো প্রত্যেকটা একেকটা আলাদা ডোরওয়ে, আলাদা আলাদা রঙ, আলাদা আলাদা পোয়েটিক ইউনিভার্স। 

 

উমাপদ কর- আমি একটু বলি? আমি, এই ধরা যাক কথাটায় গুরুত্ব দিচ্ছি। এবং চারপাঁচটা অ্যাসপেক্টের কথা বলছি। আমি এই ছবি, ডায়াগ্রাম থেকে বাইরে যাবো না। প্রথম, দেওয়া হয়েছে একটা সাদা আপতিত রশ্মি। বিচ্যুত হচ্ছে প্রতিস্রুত রশ্মি। বিজ্ঞান বলছে, প্রিজমের ধর্ম অনুসারে প্রিজম এই আপতিত রশ্মিকে রঙের মাধ্যমে বিশ্লিষ্ট বা বিচ্ছুরিত করতে পারে রঙে।এ স্বাদ বলেছে। স্বাদ হতে পারে, কোয়ালিটি হতে পারে। কবিতার ভেতরের যে ফ্রেগরেন্স অফ লাইট সেটা হতে পারে। কবিতার ভেতরের যে মেধা চিন্তা বুদ্ধিদীপ্ততা, সেগুলো হতে পারে। এবার যদি বিজ্ঞানের দিক থেকে চিন্তা করা হয়, আমরা যতটুকু অব্দি অ্যাচিভ করতে পেরেছি এখনও পর্যন্ত, এটা যদি প্রিজম না হয়ে আয়না হতো তাহলে রশ্মিটা প্রতিফলিত হয়ে যেত ও কস-থিটা সাইন-থিটার নিয়ম মেনে চলতো। প্রতিসরণের ক্ষেত্রেও, কিন্তু কতগুলো প্রিজমীয় ধর্ম অনুসারে তার এই প্রতিস্রুত রশ্মিটাও সামান্য বেঁকে, এমনকি কতটা বেঁকবে তাও ম্যাথামেটিকাল অ্যানালিসিস করা হচ্ছে। কবিতার ক্ষেত্রে যদি উৎস কবিতার কথা বলা হয়, এই যে  উৎস কবিতা, উৎস কবিতা যে মস্তিষ্কে জন্ম নিলো, এই যে ডায়াগ্রামটা আঁকা হয়েছে, তা যখন প্রতিলিপিত হচ্ছে, অক্ষম অনুবাদ শব্দটা এসেছে, এই রঙগুলো হচ্ছে সেই অক্ষম অনুবাদের একেকটা অংশমাত্র। অথবা উৎস কবিতার সঙ্গে তার সেই জায়গাটা অনেকটা প্রতিস্রুত হবে। যেমন করে বালতিতে একটা বস্তু দেখলে তা অনেকটা ওপরে উঠে আসে। এই আপাত অবস্থানটাই বিচ্যুত রশ্মি। দ্বিতীয়, এটাকে যদি কেন্দ্রক ভাবা যায়, এই আপতিত রশ্মিকে কেন্দ্রক ভাবা গেলে তা থেকে কবিতার কতগুলো আধুনিক চিন্তাভাবনা অনুসারে সে অপসারী হয়। যেমন এখানে প্রিজমের মধ্যে পড়ে এটা অভিসারী না হয়ে অপসারী হয়েছে। অর্থাৎ কেন্দ্রচ্যুত হলো, কেন্দ্রকে ভেঙে দেওয়া হলো, বা কেন্দ্র থাকলোই না। তিন নম্বর পয়েন্ট, যেটা স্বপন তুলেছে, আলো, আমরা সকলেই জানি সরলরেখায় চলে। কিন্তু আলোর যখন ফোটন তত্ত্ব সামনে আসে তখন আলোর কণা বলা হয়। এগুলো অন্যান্য ক্ষেত্রেও হয়। তো আলো তো একটা শক্তি। এটা পরের গ্রুপ ডিসকাশনে বলা যাবে, তো এই যে আলো বাঁকা পথেও যেতে পারে, তার প্রমাণ হলো, সুর্য ডোবার পরেও তার ডিফিউজড লাইটটা থেকে যায়।

 

সজল দাস - ওটা প্রতিফলনের জন্যে হয়। 

 

উমাপদ কর- আসছে কিন্তু সেটা ডিফিউজড লাইট। 

 

জয়দীপ মৈত্র- আচ্ছা যদি সূর্যাস্ত না ভেবে রামধনু ভাবিস? 

 

সজল দাস - সেটা তো প্রতিস্রুত লাইট। 

 

উমাপদ কর- কৃষ্ণগহ্বরের সামনে গেলেও সে শুষে নেয়। ভারী কোনও জিনিসের কাছে গেলেও বাঁক নিতে পারে। তাহলে ফোটন তত্ত্ব অনেক সময় মানা যায়। কিন্তু ফোটন তত্ত্বই কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের শেষ নয়। বরং আধুনিক বিজ্ঞান আরও অন্যরকম। যেটা ও বললো, তাতে করে কিছু কণার ভেদ করার ক্ষমতা থাকে। এমনিতে কিন্তু তা করার কথা নয়। যদি ভেদ করতে পারতো, তাহলে ছায়াটা  পড়তো না । এই জটিল জায়গাগুলো একটা কবিতার প্রক্রিয়াকরণের মধ্যে থাকে বলেই তার বিচ্ছুরণ অপসারণ ঘটে। সে অভিসারী হতে পারেনা। মননে যখন আলো পড়ে, যা উৎস কবিতা, সেই উৎস মুখ থেকে তার জার্নিটা যেন এই প্রিজম দিয়ে দেখানো হচ্ছে। আর আমার চার নম্বর পয়েন্ট, যা সবটা কবিতার সাথে যায়না। এই যে প্রিজমের ত্রিতল, এই ত্রিতলের অ্যাসপেক্টের জন্যেই, কিন্তু এই ঘটনা ঘটছে। আয়না, বা দ্বিতল, কনকেভ, বা কনভেক্স হলে আলাদা হত। তাহলে কী দাঁড়ালো? পদার্থের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, শুধুমাত্র তার মেটেরিয়ালের ওপরেই এটা নির্ভর করেনা। আমি যা বললাম, আয়না কাচের তৈরি। প্রিজম, প্রায় কাচ, লেন্সও কাচ। মেটিরিয়ালের ওপরেই শুধু এটা ডিপেন্ড করেনা। তাই একইভাবে যে নিসর্গ, যে প্রকৃতি, যে মানুষ, যে সভাজন আমরা দেখছি, এনরিচড হচ্ছি, একই মেটেরিয়াল পাওয়া সত্ত্বেও একভাবে ক্লিক করেনা। এটা আমরা সকলেই স্বীকার করি। যেহেতু একভাবে ক্লিক করেনা, তাই তার অপসারী রশ্মির ভিন্নতা জন্মায়। তাই হাজার হাজার কবিতা হয়। হাজার রকমের কবিতা হয়। এই চারটে পয়েন্ট আমার মনে হয়েছে। 

 

চিত্তরঞ্জন হীরা- ধরা যাক আমার ভেতরে কবিতা আপতিত হলো। আমি বিজ্ঞানের ব্যাখ্যায় যাচ্ছিনা। পার্থর জায়গাটা কিছুটা জানি বলে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, কবিতা আমার মধ্যে কি আপতিত হয়? যদি প্রিজম ছেড়েই দিই, প্রশ্নটা আমার ভেতর এই আলোচনা থেকেই এলো, আমার ভেতরে কবিতা কখনই আপতিত হয়না। আমার ভেতরে একটা ধ্বনি, একটা শব্দ ,অথবা একটা  দৃশ্য আপতিত হলো। ধরা যাক, মুহূর্তেই একটা ভাবনা এসেছিল। এবার কী হয়, সেটাকে হয় লজিকালি, অথবা লজিককে ভাঙার জন্য আরেকটা লজিক প্রতিষ্ঠা, সেরকমই, দুটো লাইন এসেছিলো। এক মুহূর্তে বসেই। “আমার মৃত্যুর নাম জীবন”। কোনো লজিক ছাড়াই এই লাইনটা আমার মাথায় এসেছে। এইবার আমি, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ভাবছি, জানিনা প্রিজম হবো না কী হবো, হাতে কাগজকলমও নেই, মোবাইলও নেই, ভাবছি, এই লাইনটা আমার মধ্যে কেন এল? আমি তখন কী করি? আমি যেতে যেতেই খুঁজি, এই মুহূর্তে আমি কী কী দেখেছিলাম? বা চারপাশের মানুষজন যারা কথা বলছিলো তারা কী কী বলছিলো? তার মধ্যে থেকেই কি তিনটে বা চারটে শব্দ আমার মধ্যে এলো? অবস্থার পরিবর্তন ঘটলো। চলছি আমি, বা বসে আছি, বা ওই মুহূর্তে আমাকে কেউ ডাক দিলো, আমি তার সাথে অন্য বিষয় নিয়ে কথা বললাম ও সাথে সাথেই আবহটা ভেঙে গেলো। পরে যখন আবার একা হলাম, ভাবনার জন্য তো একা হতেই হবে, একা হয়ে চারপাশের সাউন্ডগুলো সরিয়ে আবার ভাবতে বসলাম, এটা এর পরে কী হতে পারে। এর পরেই ওই বিচ্ছুরণগুলো  শুরু হচ্ছে। একেকটা শব্দ বা টোটাল এই লাইনটা থেকে, পরবর্তী অবস্থানগুলো আমার ভেতরে তখন  নির্মিত হতে শুরু করছে। এরপরে সাদা পাতা বা মোবাইলের সামনে বসছি, তখন তার পরের অবস্থানগুলো সাজাতে বসছি। যা এই মুহূর্তে আমি বলতে পারব না। আমি বসব যখন, তখন আমার সেই চিরন্তন, মনন আমি ফিরিয়ে আনব ও তার পরের অবস্থানগুলোর সেটার সাথে আর যোগই হয়তো থাকলো না। আলো দিয়ে কথাটা বললে, আপতিত রশ্মি যদি সবুজ হয়, এবং পরের রশ্মি যদি নীল হয়, তাহলে সেই সবুজের সাথে নীলের কোনও যোগ থাকল না। দেখা গেল যদি সাতটা লাইন সাজাই, এমনও হয়, সেই মুহূর্তে হলনা, হয়তো অনেক পরে কোন মুহূর্তে গিয়ে যদি পরবর্তী আরেকটা পংক্তি আসে,  ওরকম কয়েকটা শব্দ দিয়ে আমি সাজালাম, এই সাজানোর পর, সেই গোটা সাত বা দশ লাইনের যে নির্মিতিটা ঘটলো, তাতে প্রথম অবস্থানের সাথে শেষ অবস্থানের কোন সম্পর্ক রইলো না। কিন্তু প্রত্যেকে আলাদা আলাদা বোধ, বা যদি রঙ বলি, তা তৈরি করলো। তাতে যে অবস্থান তৈরি হল, সেটাকে কিন্তু আমি আর প্রোডাক্ট বলবো না। সেটা হলো আমার শুরু থেকে শেষ অব্দি সেই অবস্থানটা। সেই অবস্থানের সাথে আমার চেতনাবিন্দুর মধ্যে ক্রিয়া করা কিছু শব্দ, কিছু ঘটনা, বোধ দিয়ে ওখানে গড়ে উঠলো। তাহলে উৎস বিন্দু থেকে আমার মধ্যে যে স্পার্ক এলো, তারপর থেকে এই যে অবস্থানে এলাম, এটাকে যদি, অনুবাদ ধরা হয়, ওই প্রিজমের মধ্যে আমার ওই উৎসবিন্দুটা থেকে, তাহলে এই যে এইখানে এসে দাঁড়ালাম,সে আমাকে এই এই রঙগুলো, এই এই আলো গুলো, বোধগুলো দিলো। এইটা, এই জায়গাটায় এসে আমি দাঁড়াতে পারলাম। এরপর ওটা নিয়ে যখন বসবো, দেখা গেল পুরো মেটেরিয়ালটাই আবার সরে গিয়ে একদম এতটাই অন্য অবস্থান তৈরি হলো, এমনকি দেখা গেল, আমি আমার প্রথম লাইন যা ভেবেছিলাম, হয়তো সেটাকেই সরিয়ে দিলাম। এবং সেকেন্ড বা থার্ড  লাইনের যে বোধ আমার মধ্যে বেশি ক্রিয়া করছে, সে ওখানে ইমপোজ হচ্ছে। তার চারপাশের অন্য কণাগুলোর বা আলোগুলোর এইবার সে একটা আবহ তৈরি করছে যার মধ্যে দিয়ে আমি তখন কবিতাটা হয়তো পরের সিটিং-এ শেষ করলাম।  এরকম একটা অবস্থানের মধ্যে দিয়ে যদি যাই, এই আলোর বর্ণনা দিই, সেই আলো আর বোধ তখন মিলছে। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রের যে বিচ্ছুরণ, সেটা আমার কাছে বোধের কতগুলো রঙ। সেই রঙকে, শব্দ দিয়ে আমি অনুবাদই করছি। মানে আমার কাছে এটা হলো বোধের অনুবাদ।  

 

রাজেশ চ্যাটার্জী - বেশ। এই ডায়াগ্রামটা দিয়ে যে গ্রুপ ডিসকাশন, সেটা এবার এখানেই শেষ করা হলো।  





Post a Comment from facebook

Post a Comment from Blogger